একই রাস্তা কাটা পড়ল দুবার
নতুন বছরের শুরুতে স্যুয়ারেজ লাইনের কাজের জন্য মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা সড়কে সংস্কারকাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। পুরো সড়কের অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যে খুঁড়ে ফেলায় পায়ে হেঁটে চলাও যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাতায়াতকারীরা।
গত ৫ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো সড়কের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। রাস্তার দুই পাশে সামান্য যে অংশটুকু অবশিষ্ট আছে তা দিয়ে একের অধিক পথচারীর চলাচল করাও দুষ্কর।
রাজিয়া সুলতানা রোডের বাসিন্দা সলীল ঘোষ বলেন, কয়েকদিন আগে সড়কটির খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে। ফলে আমরা যারা এখানে বাস করি, তাদের যাতায়াত করতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সকালবেলা বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বেশ সাবধানে থাকতে হয়।
পুরো সড়কের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। রাস্তার দুই পাশে সামান্য যে অংশটুকু অবশিষ্ট আছে তা দিয়ে একের অধিক পথচারীর চলাচল করাও দুষ্কর
আরেক বাসিন্দা শাহানারা বেগম বলেন, রাস্তা কাটার ফলে আমাদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়াসহ সব কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কাজের তিন মাস আগে পুরো সড়ক খুঁড়ে পানির লাইন বসানোর কাজ করেছিল ওয়াসা। একই সময় স্যুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ হাতে নিলে জনগণের ভোগান্তি কম হতো।
রাজিয়া সুলতানা রোডের ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, একই সময়ে দুটি প্রজেক্ট গ্রহণ করা হলে দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। কর্তৃপক্ষ যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে তাহলে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ অর্ধেক কমে যায়।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, সংস্কারকাজ শুরুর আগে রাজিয়া সুলতানা সড়ক থেকে সরাসরি শিয়া মসজিদ অর্থাৎ প্রধান সড়কে ওঠা যেত। এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প রাস্তা।
মুর্তজা রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, সড়কের এমন অবস্থা যে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, জরুরি মুহূর্তের জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারবে না। হয় পাশের রোড বা মেইন রোডে আসতে হবে, ওই স্থান পর্যন্ত রোগীকে বয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন
মোহাম্মদপুরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের খোঁড়াখুঁড়িতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। সেখানে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাসমাগম কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে।
পিজ্জা ফেরিওয়ালা নামের একটি ফাস্ট ফুড দোকানে কাজ করেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, সড়ক ভালো থাকা অবস্থায় দৈনিক যে পরিমাণ বিক্রি হতো, বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। আগে ভালোই বিক্রি হতো। সারাদিন এই পথ দিয়ে ক্রেতাদের যাওয়া-আসা থাকত। কিন্তু এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। দৈনিক বিক্রি তিন-চার হাজার টাকায় ঠেকেছে।
‘ব্যবসা কমে গেলেও বাড়ি ভাড়া বা আনুষঙ্গিক খরচ কোনোটাই কমেনি। ফলে লোকসানের অঙ্ক সহসাই কমছে না।’
পিজ্জা ফেরিওয়ালার পাশে অবস্থিত বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোর। হতাশার সুর পাওয়া গেল সেই দোকানির ভাষ্যেও। দোকানি রিয়াদ বলেন, আগে যে পরিমাণ ব্যবসা হতো, বর্তমানে তার অর্ধেকও হচ্ছে না। দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
মোহাম্মদপুর এলাকার নাগরিক সমস্যা নিয়ে কাজ করে ‘মোহাম্মদপুর অ্যালায়েন্স’। সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক পারভেজ হাসান সুমন বলেন, রাজিয়া সুলতানা রোডে সাম্প্রতিক সময়ের খোঁড়াখুঁড়ি কার্যক্রম নিয়ে নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। মাত্র তিন মাস আগে ঢাকা ওয়াসা ওই সড়কের কাজ শেষ করেছে। এখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কাটছে। তাদের এমন কার্যক্রম সমন্বয়ের অভাবের স্পষ্ট উদাহরণ।
‘ওয়াসা ও ডিএনসিসি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে কাজ করলে একবারেই সড়কটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন হতো। এটি করতে পারলে সময়, অর্থ ও নাগরিক অসুবিধা— সবই কমানো যেত। অথচ সমন্বয়ের অভাবে মানুষকে দুই দফায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটিই প্রথম নয়। আমাদের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, একই চরিত্র দেখে আসছি। পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রমের নামে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।’
আমার মনে হয়, এমন কার্যক্রম নগর উন্নয়নের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ভবিষ্যতে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। নগরবাসীর স্বস্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি— বলেন পারভেজ হাসান সুমন।
রাজিয়া সুলতানা সড়কের সংস্কারকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে— জানতে চাইলে দায়িত্বরত ব্যক্তি মো. সবুজ বলেন, যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মানুষকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমার আশা করছি, তিন মাসের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ করতে পারব।
ওএফএ/এমজে