হুবহু জার-মোড়ক, লোগোয় আসল-নকলে ধাঁধা
হুবহু একই ধরনের মোড়কে তৈরি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। বাইরে থেকে দেখে সাধারণ ক্রেতার বোঝার উপায় নেই যে এটি আসল নাকি নকল। আসল আমদানিকারকের স্টিকারের মতো হুবহু স্টিকারও লাগানো রয়েছে নকল পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। রয়েছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ছাপ। সরকারের তদারকি সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে এসব প্রসাধনসামগ্রী।
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় তিন শতাধিক নকল প্রসাধনসামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে নকল প্রসাধনী দেশের বড় বড় সুপারশপ, বিপণিবিতান, মফস্বল শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় অবাধে চলছে ভেজাল প্রসাধনীর রমরমা ব্যবসা।
রাজধানীর মিরপুর, ইসলামবাগ থেকে পুরানা পল্টন হয়ে চকবাজার পর্যন্ত নকল পণ্য তৈরির কারবারিরা গড়ে তুলেছেন বিশাল এক নেটওয়ার্ক। রাজধানীর বেশ কয়েকটি ময়লা ফেলার ভাগাড় (ডাম্পিং স্টেশন) থেকে এসব প্রসাধনীর খালি বোতল/জার/মোড়ক সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে তাদের কাছে। এছাড়া চকবাজারের অসাধু একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, দুবাই ও থাইল্যান্ডের নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর নকল মোড়ক চীন থেকে বানিয়ে আনছে। চকবাজারে অধিক মুনাফায় তা বিক্রি করা হচ্ছে
ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর, ইসলামবাগ থেকে পুরানা পল্টন হয়ে চকবাজার পর্যন্ত নকল পণ্য তৈরির কারবারিরা গড়ে তুলেছেন বিশাল এক নেটওয়ার্ক। রাজধানীর বেশ কয়েকটি ময়লা ফেলার ভাগাড় (ডাম্পিং স্টেশন) থেকে এসব প্রসাধনীর খালি বোতল/জার/মোড়ক সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে তাদের কাছে। এছাড়া চকবাজারের অসাধু একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, দুবাই ও থাইল্যান্ডের নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর নকল মোড়ক চীন থেকে বানিয়ে আনছে। চকবাজারে অধিক মুনাফায় তা বিক্রি করা হচ্ছে।
নকল পণ্যের কারখানাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, চকবাজার, বেগমবাজার, রহমতগঞ্জ, কামালবাগ, খাজেদেওয়ান, ইসলামবাগ, দেবীদাসঘাট, বড় কাটারা, ছোট কাটারা ও কামরাঙ্গীরচরে।
কীভাবে ভেজাল প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে, কীভাবেই তা ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে— এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে ঢাকা পোস্ট। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিন ধাপে বাজারে ছড়াচ্ছে ভেজাল প্রসাধনসামগ্রী।
১. প্রসাধনীর পুরাতন বা ব্যবহৃত মোড়ক/জারে ভেজাল উপকরণ দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। ২. অনুমোদন ছাড়াই ঘরে বসে মানহীন উপকরণে নকল মোড়ক ও ট্যাগ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে প্রসাধনী। ৩. দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে চীন থেকে দেশি-বিদেশি অনুমোদিত ব্র্যান্ডের হুবহু তৈরি নকল প্রসাধনী আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
১. প্রসাধনীর পুরাতন বা ব্যবহৃত মোড়ক/জারে ভেজাল উপকরণ দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। ২. অনুমোদন ছাড়াই ঘরে বসে মানহীন উপকরণে নকল মোড়ক ও ট্যাগ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে প্রসাধনী। ৩. দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে চীন থেকে দেশি-বিদেশি অনুমোদিত ব্র্যান্ডের হুবহু তৈরি নকল প্রসাধনী আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে
ময়লার ভাগাড় থেকে ইসলামবাগে যাচ্ছে প্রসাধনীর মোড়ক
কিশোরগঞ্জের উজ্জ্বল হোসেন, ২১ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুর কালশী এলাকায় বসবাস। ২০০১ সাল থেকে তিনি ময়লা পরিবহনের কাজ করছেন। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট সংলগ্ন বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করেন। সেই ময়লা তিনি লোকাল গার্বেজ স্টেশন বা ডাস্টবিনে ফেলেন।
উজ্জ্বল বলেন, ময়লা সংগ্রহের সময় তিনি প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য অর্থাৎ বোতলজাত কসমেটিকস পণ্যের খালি মোড়ক আলাদা করে রাখেন। পরে সেসব মোড়ক বিক্রি করেন কালশী এলাকার ভাঙারির দোকানে।
উজ্জ্বল হোসেন সরাসরি সিটি করপোরেশনের কর্মী নন। টেন্ডারের মাধ্যমে ওই এলাকার ময়লা সংগ্রহের কাজ নিয়েছেন সোহেল মিয়া। তার অধীনে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন উজ্জ্বল। তিনি একা নন, তার মতো আরও ১০ জন ময়লা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত।
ঢাকা পোস্টকে উজ্জ্বল বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ময়লা সংগ্রহ এখন আগের মতো নেই। অনেকটা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সকালে চাকরি আছে তো বিকেলে নেই। তাই বিভিন্ন কায়দায় চলতে হচ্ছে। ময়লা থেকেই রোজগারের পথ বের করে নিতে হচ্ছে।’
কী সেই পথ— জানতে চাইলে উজ্জ্বল বলেন, ‘বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লা/আবর্জনা থেকে আলাদা করা হয় প্লাস্টিকের বোতল (প্রসাধনসামগ্রীর মোড়ক)। এগুলো ১৩-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। রাজধানীর কালশী, আমিনবাজার ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাঙারির অনেক দোকান আছে। এগুলো সেখানে বিক্রি করি। ভাঙারির দোকানগুলো তা বিক্রি করে ইসলামবাগে।’
উজ্জ্বলের মতোই ময়লা সংগ্রহ করেন আব্দুস সাত্তার। চল্লিশোর্ধ্ব আব্দুস সাত্তার থাকেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ায়। ছয়/সাত মাস আগে তিনি ময়লা টানার কাজ নেন। ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকা মানেই কেমিক্যালের দোকান, গোডাউন। সেখানে যেসব প্লাস্টিকজাত কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক দানা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই তৈরি হয় ইসলামবাগে। আর ইসলামবাগে এসবের জোগান দেয় আমাদের মতো কর্মীরা। ভাঙারির দোকান থেকে যাওয়া বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রীর খালি বোতলের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে সেখানে।
মিরপুর-কালশী ও ভাষানটেক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে শত শত ভাঙারির দোকান। সেখানে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রসাধনীর ব্যবহৃত খালি প্লাস্টিকের মোড়কসহ অন্যান্য প্লাস্টিকজাত পণ্য।
কথা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ প্লাস্টিকজাত ভাঙারির মাল যায় ইসলামবাগে। সেখানে ছোট-বড় হাজার হাজার প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোতে প্লাস্টিকজাত ভাঙারির মাল গুঁড়া করা হয়। এরপর কেমিক্যাল মিশিয়ে রং পরিবর্তন করা হয়। নতুন করে তৈরি করা হয় প্লাস্টিক পণ্য।
আবুল কালাম বলেন, ইসলামবাগে প্রসাধনী পণ্যের খালি প্লাস্টিক মোড়কের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। তার কথায় উঠে আসে ভেজালের গন্ধ।
সরেজমিনে ইসলামবাগে গিয়ে এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ভাঙারির দোকানদারদের মাধ্যমে আসল প্রসাধনীর ব্যবহৃত খালি মোড়ক পৌঁছে যাচ্ছে অসাধু কারবারিদের হাতে। সেসব মোড়ক পরিষ্কার করে ভেজাল উপকরণ ঢুকিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
মকবুল মিয়ার বাড়ি কেরানীগঞ্জে। থাকেন ইসলামবাগে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইসলামবাগে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। তিনি সেসময় প্লাস্টিক পণ্য মেশিনে ভেঙে গুঁড়া করে রোদে শুকাচ্ছিলেন। বলেন, ইসলামবাগের সব ব্যবসায়ী অসাধু নয়। সবাই ভেজাল ব্যবসা করেন না। তবে, এখানে ভেজাল ব্যবসার অনেক সুবিধা। সব উপকরণ মেলে সহজে।
‘ভেজাল প্রসাধনী তৈরির কারখানার পাশাপাশি এখানে রয়েছে ব্র্যান্ডের আদলে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানাও। আপনি যেমন পণ্য চাইবেন তেমনটাই পাবেন ইসলামবাগে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে অনেক কারখানা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচরে।’
গত ১১ মার্চ রাজধানীর চকবাজারে এমন একটি ভেজাল কারখানার সন্ধান পায় ঢাকা পোস্ট। চকবাজার থানাধীন ১-২ যাদব নারায়ণ দাস লেন (মিটফোর্ড রোড), বংশীবাজারের একটি ভবনে তৈরি হচ্ছিল প্রসাধনসামগ্রী বেবি লোশন, বেবি সাবান, বেবি অয়েল, ফেস ওয়াশ, ক্রিম, মেহেদিসহ বিভিন্ন ভেজাল উপকরণ। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর খালি বোতলও দেখা যায়।
সেখানকার শ্রমিক সুজন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারখানার মালিক হাজি মো. নবীউল্লাহ। তার চাহিদা মোতাবেক তৈরি হয় ভেজাল প্রসাধনী জনসন’স বেবি লোশন- ১০০ এমএল, জনসন’স বেবি অয়েল- ১০০ এমএল, জনসন’স বেবি সোপ- ৫০ এমএল, জনসন’স অলিভ অয়েল- ১০০ এমএল, ভেসলিন হেয়ার টনিক অ্যান্ড স্কাল্প কনডিশনার, এলোভেরা সুথিং জেল- ২৬০ এমএল, জাফরান হেয়ার গ্রোথ থেরাপি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনুমোদন ছাড়াই হারবাল স্কিন ব্রাইট ক্রিম, কিরনমালা অ্যাকটিভ গোল্ড মেহেদিও তৈরি হচ্ছিল কারখানাটিতে। সেখানকার তৈরি কয়েকটি প্রসাধনীর স্যাম্পলও সংগ্রহ করে ঢাকা পোস্ট।
একই কারখানার অপর শ্রমিক রমজান আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটির প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অনুমোদন, কেমিস্ট (রসায়নবিদ) বা ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) নেই। নিজস্ব ও বিশ্বস্ত লোকদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয় কেমিক্যাল, কসমেটিকস জার বা বোতল ও লেভেল। চকবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মালিকের নিজস্ব ও পরিচিত লোক আছেন। তারাই বিক্রি ও সরবরাহে সহযোগিতা করেন। ৩০০ টাকা মূল্যের প্রসাধনী পণ্য তৈরিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। সেটা বাজারে ১০০, ১৫০ বা ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রায় তিন গুণ লাভ!
দুদিন পর অর্থাৎ ১৩ মার্চ সেখানে হানা দেয় ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার হন হতভাগা দুই কর্মচারী রমজান ও সুজন মিয়া। তবে ঠিকই গা-ঢাকা দেন মালিক নবীউল্লাহ।
আবাসিক ভবনেও নকল কারখানা
রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার বি ব্লকের ৬নং সড়কের ১৬২নং বাসাটি রিয়াজুল ইসলাম শহীদের (৪৪)। সেখানে বসবাসের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে ভেজাল প্রসাধনী তৈরির কারখানা। আব্দুল মালেক ও লাল মিয়া নামের দুই কর্মচারীকে নিয়ে দেশি-বিদেশি নকল প্রসাধনী তৈরি করেন শহীদ।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর পরিচয় গোপন করে সরেজমিনে ওই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের বাসা-বাড়িতে তেল, ক্রিম, লোশন, ফেস ওয়াশসহ বিভিন্ন ভেজাল প্রসাধনী তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এলাকাবাসী এর কিছুই জানেন না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, বাজারে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর লেবেল ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ ভাগ প্রসাধন পণ্যের বিএসটিআই’র সনদ নেই, ৭৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই
ক্রেতা সেজে কর্মচারী আব্দুল মালেকের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করেন এ প্রতিবেদক। তবে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। পরে অপর কর্মচারী লাল মিয়ার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, কারখানায় রিজন কুমারিকা হেয়ার অয়েল, হেয়ার ফল ও ড্যানড্রাফ কন্ট্রোল, পাতানজলি হেয়ার অয়েল, রিজন নেমাটো ও হোয়াইটেনিং বডি লোশন, রিজন নেমাটো নিম পাতা হেয়ার অয়েল, পাতানজলি হেয়ারটোনিং ক্রিম, রিজন গোল্ড হেয়ার রিমুভার ক্রিম, গ্লিসারিন, রিজন রেড ব্রাউন হেয়ার কালার ক্রিম, পাতানজলি হোয়াইটেনিং থ্রি-ডি গ্লো ফেয়ারনেস স্কিন ক্রিম, রিজন কালো জিরা তেল, অর্গানিক অর্গান, ভার্জিন নিম ফেয়ারনেস ফেস ওয়াশসহ নানা ব্র্যান্ডের নকল কসমেটিকস পণ্য তৈরি ও বিক্রি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারখানার মালিক রিয়াজুল ইসলাম শহীদ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো, কেমিস্ট বা ল্যাব ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ভেজাল প্রসাধনী উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় ২০১৯ সালের ৩ মে প্রতারণা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, বাজারে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর লেবেল ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ ভাগ প্রসাধন পণ্যের বিএসটিআই’র সনদ নেই, ৭৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই।
ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা র্যাবের সাবেক এক ম্যাজিস্ট্রেট (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, নকল কসমেটিকস এখন সরাসরি চায়না থেকে তৈরি করে আমদানি করা হচ্ছে। আবার খালি মোড়কও আমদানি করা হচ্ছে। যা দিয়ে বাংলাদেশেই কাউন্টারফিড প্রডাক্ট তৈরি করা হচ্ছে। এখানেই লেভেলিং, এখানেই প্যাকেজিং হচ্ছে।
‘র্যাবে দায়িত্বপালনকালে (ম্যাজিস্ট্রেট) বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় এমন কমপক্ষে ৩৩টি নকল দেশি-বিদেশি কসমেটিকস পণ্য ঢাকায় তৈরি ও বাজারজাতের তথ্য আমি পেয়েছি।’ কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না ভেজাল কসমেটিকসের কারবার— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমি দেখেছি, ভেজাল কারবারিদের পেছনে প্রভাবশালীদের মদদ রয়েছে। রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। যে কারণে অনেক সময় অনেক জায়গায় অভিযান চালাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।
‘নজরদারি’ সম্ভব নয়, তবে ব্যবস্থা আছে : ডিএনসিসি
ভেজাল কসমেটিকস কারবারের শুরুর অংশে জড়িয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশনের নাম। বিশেষ করে যারা ময়লা সংগ্রহ করেন। সিটি করপোরেশনের ওইসব কর্মী সংগৃহীত ময়লা অর্থাৎ ব্যবহৃত বিভিন্ন কসমেটিকস বোতল বা খালি জার ভাগাড়ে না ফেলে তা ভেজাল কারবারিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এখানে সিটি করপোরেশনের কি নজরদারি নেই?
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি করপোরেশন সরাসরি এখন ময়লা নেয় না। আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড যেটি রয়েছে, সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার টন ময়লা ফেলা হয়। সেখান থেকে আমরা ময়লাগুলো নিই সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) মাধ্যমে। এসটিএস ময়লাগুলো নেয় প্রত্যেক পাড়া-মহল্লা থেকে ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে। এসটিএস থেকে এগুলো (কসমেটিকস বোতল বা খালি জার) আলাদা হয়ে যেতে পারে। ল্যান্ডফিল্ড থেকে এ সুযোগ নেই।
‘এখন সিটি করপোরেশনের পক্ষে তো বাসাবাড়ি থেকে কসমেটিকস পণ্যের কৌটা বা জার আলাদা করে ব্যবস্থাপনায় আনা সম্ভব নয়। তবে, এ ক্ষেত্রে ভোক্তারা যদি সচেতন হন তাহলে ভেজাল কারবারিরা এসব খালি জার বা কৌটা পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন না।’
কীভাবে— তার ব্যাখ্যা দিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ব্যবহার করা কসমেটিকস জার বা বোতল যদি কেটে ফেলা হয় অথবা ভেঙে ফেলা কিংবা ফুটো করে দেওয়া হয়, তাহলে তা আর ব্যবহার করা যাবে না। আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য দিতে হবে— এমন বাধ্যবাধকতা থাকলে তখন আর কেউ ময়লা বাছার সুযোগ পাবে না। সব ময়লা যাবে ল্যান্ডফিল্ডে। যেখান থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ।
ডিএনসিসি’র অধীন বিভিন্ন মার্কেটে ভেজাল কসমেটিকস বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন— জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এ বিষয়ে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা অত্যন্ত সক্রিয়।’
তৃতীয় পর্বে থাকছে-
ভেজাল বন্ধে আছে ক্রেতাদেরও দায়
জেইউ/এমএআর/