মাদকাসক্তির ভয়াবহতা নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে
মদ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ তথা নামাজ কালাম থেকে বিমুখ করে এবং চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংস করে দেয় এবং তাকে পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়, মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতকে ধ্বংস করে দেয়। প্রিয় নবী বলেন, মদ পান কর না, কারণ তা সব অনাচারের চাবিকাঠি। (ইবনে মাজা)
সমাজে বিশৃঙ্খলা ও শত্রুতা
মদ ও মাদকদ্রব্যের আরেকটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হলো এর মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ -(সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯১)
শয়তানের কাজ
পবিত্র কোরআনে মাদক গ্রহণকে শয়তানের কর্ম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -(সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০)
ইবাদত কবুল হবে না
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদপান করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না।
যদি সে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন।
সে চতুর্থবার মদপানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৬২)
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে মদ আর প্রত্যেক মদ হচ্ছে হারাম। (সহীহ মুসলিম)
আরেক হাদিসে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মদপান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এটি যাবতীয় অপকর্মের চাবি। ’ (মুবাদরকে হাকেম খণ্ড ৪, পৃ. ১৪৫; মুনজিরি হাদিস ৩৪৮৭, পৃ. ৪৫৫)।
মাদক মানুষকে বড় বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। কোরআন কারিমে বর্ণিত হারুত ও মারুত এই মাদকের নেশায় মাতাল হয়েই জোহরার ইশারায় হত্যা, ব্যভিচারসহ নানান অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১০২; তাফসিরে আজিজি ও তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)।
ব্যভিচার, হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের দিকে...
হজরত ওসমান বিন আফ্ফান রা. বলেন, মদপান থেকে বেঁচে থাকো, কারণ তা উম্মুল খবায়েছ বা সকল পাপাচারের মূল। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতে একজন আবেদ (ইবাদতকারী ব্যক্তি) ছিলেন। এক ব্যভিচারী সুন্দরী নারীর সাক্ষ্য দেবার কথা বলে তাকে ডেকে পাঠাল। ঘরে ঢুকতেই বন্ধ করে দেয়া হল সব দরজা।
এ সময় সেই নারীর কাছে একটি মদের পেয়ালা ও শিশু ছিল। সেই নারী তাকে বললেন, আমি আপনাকে মূলত সাক্ষ্য দেবার জন্য ডাকিনি, বরং ডেকেছি এই উদ্দেশ্যে যে, হয় আপনি আমার সঙ্গে ব্যভিচার করবেন, অথবা মদ পান করবেন, অথবা এই শিশুকে হত্যা করবেন। অন্যথায় এখানে কু-মতলবে এসেছেন বলে চিৎকার দিয়ে মানুষের কাছে আপনাকে অবমান করবো।
তখন সেই আবেদ (ইবাদতকারী ব্যক্তি) ভাবলেন ব্যভিচার ও শিশুকে হত্যার থেকে মদ পান করা ভালো। তাই তিনি অপারগ হয়ে মদ পানে সম্মতি দিলেন। তখন তার সামনে এক গ্লাস মদ পরিবেশন করা হলো, এক গ্লাস মদ পানের পর নেশাগ্রস্ত হয়ে সে আরও আরো চাইল এবং এক সময় নেশার ঘোরে সেই শিশুটিকে হত্যা করল এবং নারীর কুমতলবে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো।
হজরত ওসমান রা. বলেন, তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক। কারণ এটাই হচ্ছে সকল পাপাচারের মূল। কোন ব্যক্তির অন্তরে যদি ঈমান ও মদ্যপান একত্রিত হয় তখন একটি (মদ্যপান) অন্যটিকে ( ঈমানকে) বিদূরিত করে দেয়। (নাসাঈ শরীফ)
এনটি