মাওলানা সাদ কি আসবেন দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়?
ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে কাকরাইলের আলমী শুরার ইজতেমা। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হবে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারীদের ইজতেমা। ২০ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরুর আগে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মাওলানা সাদের অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পক্ষের কাছ থেকে মাঠ বুঝে নেব। এরপর ওই দিনই বেলা ১১টার মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেব।’
ভারতের মাওলান সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে আলাদা হয়ে যায় তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম। এর জেরে ২০১৮ সাল থেকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। মাওলানা সাদকে ঘিরে বিভক্তির জেরে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন না তিনি।
এবার তিনি আসবেন কি না জানতে চাইলে মাওলানা সাদ অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সায়েম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মাওলানা সাদ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা তার অংশগ্রহণের ব্যাপারে আশা রাখছি, তবে তিনি না এলেও তার ছেলে বা তিনি যাকে আমির বানিয়ে দেবেন তার অধীনে চলবে কার্যক্রম।’
আরও পড়ুন >>> বিশ্ব ইজতেমা : সম্প্রীতির মেলবন্ধন
বিপুল সংখ্যক বিদেশি মেহমান অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য দেশের বাইরে থেকে মেহমানরা আসতে শুরু করেছেন, ভারতের নিজামুদ্দীন থেকেও আসবেন গুরুত্বপূর্ণ মুরব্বিরা।’
তিনি বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষ একসঙ্গে থাকাকালীন মাওলানা সাদ যখন প্রতিবছর ইজতেমায় আসতেন তখন বিদেশি সাথীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের মতো হতো। মাওলানা সাদ না এলে বিদেশি সাথীরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে চান না।’
এদিকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভি অংশ নেবেন না -এমন ইঙ্গিত দিয়ে সাদ অনুসারী দায়িত্বশীল মাওলানা জিয়া বিন কাসেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকেই বয়ান শুরু হবে। তবে আমাদের ইজতেমার কার্যক্রম এবং কে, কখন বয়ান করবেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বুধবার রাতে। মাওলানা সাদ দিল্লি থেকে যাকে আমির হিসেবে পাঠাবেন বা তিনি যে প্রতিনিধি দল পাঠাবেন তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, দিল্লির নিজামুদ্দীন থেকে ৫০ জন মেহমান আসার কথা আছে। চারজন মেহমান আসবেন আজ সোমবার, বাকিরা আসবেন আগামীকাল।
ইজতেমা শেষে মাঠ ছাড়ার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আলমী শুরার মিডিয়া সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মুফতি জহির ইবনে মুসলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের বিদেশি সাথীদের সবাই মাঠ ছেড়ে গেছেন, আগামীকাল বেলা ১১টায় মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশি সাথীদের কেউ কেউ মাঠে অবস্থান করবেন।’
বাংলাদেশে ১৯৬৩ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবছর অনুষ্ঠিত ইজতেমা বিশ্ব মুসলিমের গণজমায়েতের ৫৭তম আসর। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা এক পর্বে তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়।
মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো। কিন্তু মাওলানা সাদকে ঘিরে বিরোধের কারণে ২০১৮ সাল থেকে আলাদাভাবে দুই পক্ষ আলাদাভাবে তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা শুরু করে।