মেক্সিকোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে : আবিদা ইসলাম
আবিদা ইসলাম। মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। বেছে নিয়েছেন চ্যালেঞ্জিং জীবন। দেশের মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে জীবনটাকে উপভোগ যেমন করছেন, তেমনি গড়ছেন একে একে সাফল্যের সিঁড়ি, যে সাফল্যের সঙ্গে মিশে আছে উচ্ছল-উজ্জ্বল বাংলাদেশের গল্প। পেশাদার এ কূটনীতিক মুখোমুখি হন ঢাকা পোস্টের। কথা বলেন নানা বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওমর ফারুক হিমেল-
ঢাকা পোস্ট : মেক্সিকোর সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ঢাকায় দূতাবাস স্থাপন নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
আবিদা ইসলাম : মেক্সিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৫ সালের জুলায়ে। ২০১১ সালে প্রয়াত পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের নেতৃত্বে একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ দল মেক্সিকো সফর করেন। ওই প্রতিনিধি দলের সুপারিশে ২০১৩ সালে মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ঢাকায় মেক্সিকোর কোনো দূতাবাস বা ভিসা অফিস এখনো স্থাপিত হয়নি। নয়াদিল্লির মেক্সিকো দূতাবাস বাংলাদেশের সমবর্তী দায়িত্বে নিয়োজিত। যদি ঢাকায় মেক্সিকোর একটি কনস্যুলেট বা কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করা যায়, তাহলে মেক্সিকোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মেক্সিকান ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে আইসিটি, তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, আসবাবপত্র, আলোক-সজ্জায় ব্যবহৃত আলো ও ডায়পার পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। তারা সামুদ্রিক লবণ ক্রেতা ও বাংলাদেশের সুপার মার্কেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হতে চায়। তারা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য, অটো পার্টস, তেল ও তেলের ডেরিভেটিভস রফতানির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
উদার গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ-মেক্সিকোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক মিল রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা- এসব ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান লাভ করতে পারি। বিগত আট বছরে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছুটা অগ্রগতি হলেও ভৌগলিক দূরত্ব ও ভাষার প্রতিবন্ধকতার কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো এখনো পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হতে পারেনি। তবে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার অনেক সুযোগ রয়েছে। মেক্সিকো সিটির বাংলাদেশ দূতাবাস এই কাজে নিয়োজিত।
ঢাকা পোস্ট : ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুই দেশের ৪০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উদযাপন করতে মেক্সিকো সফর করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে আন্তোনিও মেইডের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন শাহরিয়ার আলম। এই সফর সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
আবিদা ইসলাম : ২০১৫ সালে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মেক্সিকো সফর করেন। যেটি ছিল মেক্সিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা। তখন মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগদানসহ বাংলাদেশ থেকে একটি সামরিক দল ও একটি সাংস্কৃতিক দল পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে অংশ নিতে একটি সামরিক প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় মেক্সিকো।
মেক্সিকোর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত কারমেন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাবিত শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি তার সরকারের বিবেচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমডিজি ও এসডিজিতে বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে বিশদভাবে অবহিত করেন। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে সমর্থনের জন্য মেক্সিকো সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
সেই সঙ্গে, নিয়মিত দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ সভা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, ভাষা প্রশিক্ষণসহ উভয় দেশের কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার ওপরে গুরুত্ব প্রদান করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি দ্রুত স্বাক্ষর করার বিষয়ে মেক্সিকোর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারমেনকে অনুরোধ জানান।
ঢাকা পোস্ট : গেল কয়েক বছর আগে দুই দেশের মধ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীর হয়। কিন্তু এখনো দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সফর হয়নি। দুই দেশের সরকারপ্রধানদের রাষ্ট্রীয় সফরের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
আবিদা ইসলাম : দুই দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সফর না হলেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মন্ত্রী পর্যায়ের সফর হয়েছে। যা এখনো চলমান। এছাড়া করোনা মহামারির কারণে দ্বিপাক্ষিক ভ্রমণে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মেক্সিকো সিটি সফর করেন। এছাড়া মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার সময় আমি তাকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি শিগগির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। দুই দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক সফর। আমি এ বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।
ঢাকা পোস্ট : বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ-মেক্সিকোর কাজের অগ্রদূত কতটুকু?
আবিদা ইসলাম : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মেক্সিকোর উপ-বাণিজ্য উপমন্ত্রী লুজ মারিয়া দে লা মোরা সানচেজের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন প্রতিমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরও জোরদার ও দ্বিপাক্ষিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গভীর আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘কানেক্টিং থ্রু বিজনেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংস্থা এফবিসিসিআই এবং মেক্সিকান বিজনেস কাউন্সিল ফর ফরেন ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে মেক্সিকোর উপ-বাণিজ্য উপমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
এছাড়া মেক্সিকোর উপমন্ত্রী বাংলাদেশকে জানান, এসএমই, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উভয় দেশ একে অপরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। তিনি এফবিসিসিআই এবং মেক্সিকান বিজনেস কাউন্সিল ফর ফরেন ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ সময় দুই দেশের বাণিজ্যিক লক্ষ্যমাত্রা ১ বিলিয়ন নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। আশা করা যাচ্ছে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে একটি গতির সঞ্চার হবে।
অপরদিকে ২০১৫ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সফর ছিল মেক্সিকোতে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক সফর হয়। যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ সভা ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া শাহরিয়ার আলমের মেক্সিকো সফরকালে এক অনুষ্ঠানে দেশটির ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা মিলিত হন। সে সময় ব্যবসায়িক সহযোগিতার সংক্রান্ত বিষয়ে এফবিসিসিআই এবং সিওএসিইর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমইউ) স্বাক্ষরিত হয়। যা ছিল মেক্সিকোর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটি ব্যবসায়িক কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ।
ঢাকা পোস্ট : মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর উদযাপনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সামরিক কন্টিনজেন্ট ও সাংস্কৃতিক দল অংশ নেয়। এ বিষয়ে কিছু বলেন।
আবিদা ইসলাম : তখন বাংলাদেশ থেকে ১৪ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল পাঠানো হয় মেক্সিকোতে। তারা মেক্সিকোর ভেরাক্রজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপস্থাপন করে যা এ দেশে অত্যন্ত সমাদৃত হয়। বিষয়টি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। তাদের আগমন, অংশগ্রহণ ও উপস্থাপনা দ্বিপাক্ষিক সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতিসঞ্চার করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবিত একটি সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক নিয়ে মেক্সিকো সরকার পর্যালোচনা করছে।
এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক প্রতিনিধি দলের মেক্সিকো সফরের ফলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে পাঁচ সদস্যের একটি সামরিক প্রতিনিধি দল পাঠায় দেশটির সরকার। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহ প্রকাশ করে মেক্সিকো।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ থেকে মেক্সিকোতে পণ্য রফতানির সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?
আবিদা ইসলাম : বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বাণিজ্যের ভারসাম্য সর্বদা বাংলাদেশের অনুকূলে থাকলেও উভয় দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ একেবারেই সন্তোষজনক নয়। মেক্সিকো থেকে বাংলাদেশ সাধারণত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, নির্মাণসামগ্রী, পোশাক উৎপাদনের জন্য মেশিনারি ইত্যাদি আমদানি করে থাকে। মেক্সিকো বাংলাদেশ থেকে প্রধানত টেক্সটাইল-পোশাক, চামড়াজাত, খেলাধুলার সরঞ্জামাদি, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, পাটজাত পণ্য, কাঠ, প্লাস্টিক ও রাবার জাতীয় পণ্য, সিরামিক এবং কাচ জাতীয় পণ্য সামগ্রী আমদানি করে থাকে।
বাংলাদেশ দূতাবাস মেক্সিকোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে আলোচনায় জানা গেছে, মেক্সিকান ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে আইসিটি, তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, আসবাবপত্র, আলোক-সজ্জায় ব্যবহৃত আলো ও ডাইপার পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। তারা সামুদ্রিক লবণ ক্রেতা ও বাংলাদেশের সুপার মার্কেট কোম্পানিগুলোর সাথেও যুক্ত হতে চায়। তারা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য, অটো পার্টস, তেল ও তেলের ডেরিভেটিভস রফতানির ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশিদের অনেকেই মেক্সিকোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে, কেউ জেলেও আছে। তাদের বিষয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
আবিদা ইসলাম : করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও ২০২১ সালে তা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২১ সালে আমাদের দূতাবাস ১১৮ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে ও সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তারা মেক্সিকোকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকা প্রবেশ করতে চান। এজন্য ১৭-২২ লাখ টাকা ব্যয় করে থাকেন। যা বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য কাম্য নয়। দূতাবাস বিষয়টি বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে দূতাবাস অবহিত নয়।
ঢাকা পোস্ট : মেক্সিকোতে বাংলাদেশের দূতাবাস স্থাপিত হয়েছে ২০১৩ সালে। আপনার সময়ে দূতাবাসের লক্ষ্য কী? কোনো বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে কি না?
আবিদা ইসলাম : আমার মেয়াদকালে অর্থনৈতিক কূটনীতি ছাড়াও, আমি দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত আদান-প্রদানের ওপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ঢাকা পোস্ট : দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর সম্পর্ক নিয়ে কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। এসব বিষয় ফেসবুকে আপডেট রাখবেন কি-না?
আবিদা ইসলাম : শুধুমাত্র আমাদের ফেসবুক নয় আমাদের টুইটার অ্যাকাউন্টেও আমরা এই ধরনের সংবাদ আপলোড করে থাকি।
ঢাকা পোস্ট : মেক্সিকোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইট যেটা অনেকদিন ধরে তথ্যহীন এবং অগোছালো। এই ব্যাপারে আপনারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
আবিদা ইসলাম : আমরা এরই মধ্যে ওয়েবসাইট আপগ্রেডের জন্য কাজ করছি। বর্তমানে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে নতুন উদ্যোগগুলো লক্ষ্য করতে পারবেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনি মেক্সিকো সমদূরবর্তী হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা, কোস্টারিকা, ইকুয়েডরেরও দায়িত্ব পেয়েছেন। এখানকার প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী?
আবিদা ইসলাম : আমি এরই মধ্যে মেক্সিকো সিটিতে কর্মরত কোস্টারিকা ও গুয়াতেমালার রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সমবর্তী দায়িত্বভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
ঢাকা পোস্ট: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আবিদা ইসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে জন্ম রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের। বাবা প্রয়াত নজরুল ইসলাম ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান কর্ম কমিশনে যোগ দিয়ে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মা সেলিনা ইসলাম ছিলেন উন্নয়নকর্মী।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মেধাবী এই কূটনীতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ১৫তম ব্যাচের মেধাবী এ সদস্য পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি বিদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা, দূরপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং জঙ্গিবাদ ও প্রশাসন। তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন, কলম্বো ও ব্রাসেলসে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে দেশের প্রথম নারী ডেপুটি হাইকমিশনার (হেড অফ মিশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার ও সামিটে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বরেণ্য এ কূটনীতিক। এখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মেক্সিকোতে।
ওএফ