অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়েও বিএনপিতে বিভেদ!
অসুস্থ হয়ে গত ছয় দিন ধরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার এ অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে দলটির শীর্ষপর্যায়ের দুই নেতার মধ্যকার ‘বিভেদ’ প্রকাশ্যে এসেছে।
ওই দুই নেতা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ওই দুই নেতার মধ্যকার বিভেদ অনেক দিন ধরে চলে আসছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ম্যাডামের মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তাদের দুজনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবারও সামনে এসেছে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাদের এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের মধ্যেও একটা বিভেদ তৈরি হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। এ বিভেদকে পুঁজি করে দলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণ কিছু নেতা রুহুল কবির রিজভীকে ঘিরে একটা বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সময়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রুহুল কবির রিজভী
অন্যদিকে, রিজভীর এমন আচরণে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিব্রতবোধ করলেও প্রাকাশ্যে কিছু বলেন না। আসলে ওই দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকৃতপক্ষে রিজভীর ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি। এখানে মির্জা ফখরুলের খুব বেশি ভূমিকা নেই। শীর্ষপর্যায়ের দুই নেতার মধ্যকার এমন দ্বন্দ্ব কারও কাম্য নয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে তো নয়ই— বলেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন মির্জা ফখরুল জানান, আগামী ২০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেওয়ার দাবিতে সারাদেশে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
একই সময় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রুহুল কবির রিজভী। ঘোষণা দেন একই কর্মসূচি। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘জ্বালানি তেল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তার পরিবর্তে গণতন্ত্রের মা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ওইদিন (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালিত হবে।
এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার সংশোধনী দিয়ে রিজভী বলেন, ‘সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে শনিবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’
রিজভীর এমন সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি দলটির সিনিয়র অনেক নেতা। গুলশানে মির্জা ফখরুলের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ রুহুল কবির রিজভী এমন কাজ না করলেও পারতেন। যখন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন, সেখানে একই সময় এককভাবে রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে কী বোঝাতে চেয়েছেন? তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তার আর মহসচিবের ক্ষমতা সমান বা তার কাছে দলের সিনিয়র নেতাদের কোনো দাম নেই?
রিজভীর ওই সংবাদ সম্মেলনে আমরা বিব্রত। এমন ঘটনা আগেও কয়েকবার ঘটেছে। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত— মন্তব্য তাদের।
একই সময়ে দুই জায়গা থেকে একই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কারণ কী— জানতে চাইলে গুলশানে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আসলে আমি তো এখানে আছি। পল্টনের সংবাদ সম্মেলনের কথা জানি না। হয়তো রিজভী সাহেব গুলশানের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতেন না। এটা নিয়ে আমি কী মন্তব্য করব?’
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন দলের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর অবস্থান সমান-সমান। দুজনকে পৃথকভাবে নির্দেশনা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ দ্বন্দ্বে পরোক্ষভাবে তারেক রহমানেরও ভূমিকা রয়েছে।
ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপিতে এখন এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে স্থায়ী কমিটির নেতা হয়েও আমাকে মির্জা ফখরুল না হয় রিজভী সাহেবকে ‘মেইনটেইন’ করে রাজনীতি করতে হয়। এর চাইতে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে!
গুলশানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করে বলেন, খালেদা জিয়া যেখানে অসুস্থ হয়ে সিসিইউতে আছেন, সেই সময়ে রিজভী সাহেবের মতো একজন সিনিয়র নেতা এমন নোঙরা রাজনীতি না করলেও পারতেন। ওনার যদি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করার এতই দরকার হয় সেটা সকালে কিংবা সন্ধ্যায়ও করতে পারতেন। একই সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বোঝালেন যে তার কাছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কোনো নেতার মূল্য নেই।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এএইচআর/এসএম