ভোটার উপস্থিতির কৌশলে ‘বেকায়দায়’ নৌকার মাঝিরা
দলীয় কৌশলে ‘বেকায়দায়’ পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবার দলীয় প্রতীকের প্রার্থী ছাড়াও যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন। ফলে নিজ দল থেকে স্বতন্ত্র হয়ে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪ দলীয় জোট থেকেও কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া, জোটের বাইরে থেকেও নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন অনেকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী মাঠ খোলা রাখায় দলীয় অনেক প্রার্থী চিন্তায় আছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর সেই চিন্তা কয়েক গুণ বেড়েছে। অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ঈগল’ প্রতীক নিয়ে ছোঁ মারার ভয় দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে, প্রার্থীদের চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আছেন বিপদে। তারা কার পক্ষে কাজ করবেন, নৌকা নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী— তা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন।
আরও পড়ুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৩ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে। এ নির্বাচনে ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের। নৌকার সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হবেন— এমন সম্ভাবনা নিয়েই মাঠে সক্রিয় তারা।
এদিকে, তফসিল ঘোষণার দিন থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আধিপত্য ও ক্ষমতা দেখানোর এ সংঘাত এখন মনোনয়ন পাওয়া, না পাওয়ার সংঘাতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হানাহানি ও মারামারির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জোটের শরিকদের আপত্তি ও দলীয় প্রার্থীদের অস্বস্তি থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ নেই।
‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কারও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আমরা রাখিনি। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন, অন্যান্য দলও আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকায় চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আমার এলাকায়ও চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী।’
আসলেই কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে— জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন তো অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে, বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে, সবাই অংশগ্রহণ করেছে। সেই নির্বাচন কী গ্রহণযোগ্য হয়েছে? এবারের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে না। বলতে গেলে এটা নির্বাচনই নয়। কারণ, নির্বাচন মানে প্রতিযোগিতা, নির্বাচন মানে যথেষ্ট বিকল্প থেকে একটি বেছে নেওয়া। এখানে ভোটাররা আওয়ামী লীগের বাইরে কাকে নির্বাচিত করবে? এখানে বিএনপি নেই। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমঝোতা করেছে যাতে শতভাগ আসন পায়। এটা নির্বাচনের খেলা।’
বদিউল আলম মজুমদারের দৃষ্টিতে ‘নির্বাচনের খেলা’ হলেও বাস্তবে কিন্তু ‘খেলা’ শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারও নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সরকারি দলের সঙ্গে তারা আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গীদের বাইরে যারা নির্বাচনে আছেন, তারাও দলের অনুগত। তৃণমূলে তাদের প্রভাবও ব্যাপক। নির্বাচন হচ্ছে মূলত নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার ‘ডামি’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর। সে কারণে অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হেভিওয়েট প্রার্থীতে পরিণত হয়েছেন। সেই হেভিওয়েটদের পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রমাণও মিলছে। অনেক এলাকা থেকে নৌকার প্রার্থীরা তার আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে বিস্তর অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয়ে অনেকে এখন নিজেদের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিষ্ক্রিয় রাখতে কেন্দ্রে অনুরোধ জানাচ্ছেন। অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে।
অন্তত ১৫ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভায় ২৩ মন্ত্রী, ১৮ প্রতিমন্ত্রী ও তিন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন বাদে সবাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। যে তিনজন মনোনয়ন পাননি তারা হলেন- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। অন্য মন্ত্রীদের আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও সেগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম হবে। তাদের বিপরীতে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নেমেছেন তাদের কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। অনেকে আবার দলের স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা। এসব আসনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজ দলের পদধারী শক্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কেন এত চিন্তা— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এবং বৈধতা পেয়েছেন তারা সবাই অংশগ্রহণ করুক, এটা আমরাও চাই। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এবার আমাদের দলের অসংখ্য প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। নির্বাচন যাতে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হয়, এটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য। এখানে তাদের নিয়ে শঙ্কা বা চিন্তার কোনো অবকাশ নেই।’
এবারের নির্বাচনের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১৫ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভায় ২৩ মন্ত্রী, ১৮ প্রতিমন্ত্রী ও তিন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন বাদে সবাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। যে তিনজন মনোনয়ন পাননি তারা হলেন- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। অন্য মন্ত্রীদের আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও সেগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম হবে। তাদের বিপরীতে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নেমেছেন তাদের কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। অনেকে আবার দলের স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা। এসব আসনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজ দলের পদধারী শক্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।
মন্ত্রীদের সঙ্গে লড়ছেন স্বতন্ত্ররা
ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং (মুরাদ)। গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের (সদর ও হাইমচর) বর্তমান সংসদ সদস্য। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভুইয়া। তার পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের একাংশ। জামালপুর-২ আসনে (ইসলামপুর উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জিয়াউল হক ও সাজাহান আলী মণ্ডল।
পিরোজপুর-১ আসনে (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরখানি) আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আবদুল আউয়াল। নরসিংদী-৪ আসনে (বেলাব-মনোহরদী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদের পাঁচবারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান। প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন। লালমনিরহাট-২ আসনে (আদিতমারী ও কালীগঞ্জ) সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক।
নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান। নেত্রকোণা-২ আসনে (নেত্রকোণা সদর ও বারহাট্টা উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান। তার সঙ্গে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয়। আরিফ খান ও তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
রাজশাহী-৬ আসনে (চারঘাট ও বাঘা উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক। নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংড়া উপজেলা পরিষদের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক। মেহেরপুর-১ আসনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন। শরীয়তপুর-২ আসনে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী। তিনি সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীকের প্রার্থী হলেন বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। যদিও তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় সাদিক আব্দুল্লাহর। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পছন্দ ‘ঈগল’ প্রতীক
নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়তে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ‘ঈগল’ প্রতীক বেছে নিয়েছেন। অনেক স্থানে একাধিক প্রার্থী ঈগল চাওয়ায় লটারির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও পেয়েছেন ঈগল প্রতীক। তিনি বলেন, ‘আমি ঈগল পাখি মার্কা নিয়েছি। যখন ঝড়-তুফান হয় তখন ঈগল পাখি নিচে নামে না, ঝড়-তুফানের উপরে উঠে যায়।’
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ওই আসনে মনোনয়ন দেয় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরুল্লাহকে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিক্সন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার জাফরুল্লাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এবার তিনিও ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান ঈগল প্রতীক পেয়েছেন। আলোচিত ব্যবসায়ী এ কে আজাদ নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনিও ঈগল প্রতীক পেয়েছেন। ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। আলোচিত এ প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মনির। তিনিও ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
তফসিল ঘোষণা এবং প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা একে-অপরের ওপর হামলা করছেন।
গত সোমবার পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং স্থানীয় তিন নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চারজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একই দিন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষে ছয়জন আহত হন।
এ ছাড়া, নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা বেশ আলোচনায় আসে।
এমএসআই/এসকেডি