‘উত্তাপের’ রাজনীতিতে সক্রিয় জামায়াত
>> সব বিভাগে সমাবেশের প্রস্তুতি
>> নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পরই ঢাকায় সমাবেশের ডাক দেয় জামায়াতে ইসলামী। মাঠের রাজনীতিতে ১৩ বছর কোণঠাসা দলটির আমির-সেক্রেটারিসহ অন্তত দুই ডজন শীর্ষনেতা জেলে থাকা অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি নিয়ে সফল সমাবেশের আয়োজন করে।
জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকতে এভাবে নির্বিঘ্নে সমাবেশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে উত্তাপ। আলোচনা হচ্ছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ কিংবা আঁতাতের!
জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকতে এমন নির্বিঘ্ন সমাবেশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে উত্তাপ। আলোচনা হচ্ছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ কিংবা আঁতাতের
এ সুযোগে আলোচনা ও রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রে থাকতে সরব থাকার সব উদ্যোগই নিয়েছে দলটি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আর জোটের রাজনীতি নেই, তবে সরকার পতনের দাবিতে একসঙ্গে থাকার কথা জানিয়েছে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী।
আরও পড়ুন >> ‘হারলে সুষ্ঠু, জিতলে কারচুপি’— বিব্রত আ. লীগ
দলীয় একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সম্ভাব্য ও মোটামুটি নিশ্চয়তা পাওয়া প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা, ভোটার ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাই-কমান্ড।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সম্ভাব্য ও মোটামুটি নিশ্চয়তা পাওয়া প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা, ভোটার ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাই-কমান্ড
যদিও হাই-কমান্ডের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নয়, কেয়ারটেকার বা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবে না তারা। নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়ার বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করলেও প্রস্তুতি ও আন্দোলনমুখি কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
আরও পড়ুন >> রেজা-নুরের দ্বন্দ্বে ভাঙতে যাচ্ছে গণঅধিকার পরিষদ
জানা গেছে, রাজনৈতিক উত্তাপ ধরে রেখে নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখি করতে ঢাকার পর পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করার লক্ষ্যে ঢাকার ন্যায় কৌশলী উদ্যোগ গ্রহণ এবং আনুষ্ঠানিক অনুমতিও চেয়েছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর এক কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিলেটের পর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা ও রংপুরে সমাবেশের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সমাবেশের মাধ্যমে আমরা দলের জনপ্রিয়তার জানান দিতে চাই। মাঠের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী বরাবর শৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক। বিভাগীয় মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলার নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করা হবে। হবে জনসংযোগও।
আরও পড়ুন >> জামায়াতের বিবৃতিতে ‘নাখোশ’ বিএনপি
তিনি আরও বলেন, আগস্টের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করা হবে। পাশাপাশি আগস্ট শেষে বড় বড় ও জামায়াত অধ্যুষিত জেলা শহরে সমাবেশ ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলা জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন জেলায় সফর বেড়েছে। নেতাকর্মীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি এবং তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে অব্যাহত সামাজিক কার্যক্রমও বাড়াতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতাসহ পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। এসব কর্মসূচি পালনের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে জনসংযোগও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের আড়ালে ইতোমধ্যে উত্তর বঙ্গের অধিকাংশ জেলায় জনসংযোগও করে ফেলেছে দলটি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদমর্যাদার এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরিব-দুঃখী, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও মেহনতি মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলে থাকা আমির ডা. শফিকুর রহমান। ঈদে জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে কোরবানির মাংস বিলিয়েছেন। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল বিতরণ, নিরাপদ বাসস্থানের জন্য নিম্ন আয় ও গরিব মানুষের মাঝে টিন বিতরণ করা হচ্ছে। এসব করতে গেলে তো জনসংযোগ হয়েই যায়।
আরও পড়ুন >> রাজনীতির মাঠে ‘জামায়াতি ধাঁধা’
অন্যদিকে, সিলেট জামায়াতে ইসলামীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রঘোষিত প্রথম বিভাগীয় সমাবেশ হবে আগামী ১৫ জুলাই সিলেট মহানগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে। ইতোমধ্যে গত ৫ জুলাই (বুধবার) সিলেট মহানগর জামায়াত সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে থেকে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। আমাদের জোর প্রস্তুতিও চলছে। আশা করছি, সরকার আমাদের ঘোষিত বিভাগীয় মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না।
আরও পড়ুন >> দুর্বল-ক্ষয়িষ্ণু আ. লীগ, চূড়া থেকে এবার তাদের পতনের পালা
নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি ও নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের জনসংযোগ সংক্রান্ত নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের যোগাযোগ বৃদ্ধি ও জনসংযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে। তবে, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি ভিন্ন বিষয়। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে, এটি স্পষ্ট যে দলীয় সরকারের অধীনে জামায়াতে ইসলামী কোনো নির্বাচনে যাবে না।
জোটে নয়, সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে একাট্টা
১৩ বছর প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে না পারা জামায়াতে ইসলামী হঠাৎ ঢাকায় নির্বিঘ্নে সমাবেশ করার পর সরকারের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সে আলোচনার উত্তাপে গত ৩০ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘি ঢেলেছেন বলে মনে করছে দলটি।
ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট। এরপর জামায়াত বিবৃতি পাঠিয়ে ফখরুলের বক্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
আরও পড়ুন >> অবস্থান পোক্ত করতে লন্ডনমুখী বিএনপি নেতারা
এ বিষয়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আপত্তিকর। জামায়াতের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ থাকলে আমির ও সেক্রেটারিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলে থাকতে হতো না৷ আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের দূরতম যোগাযোগও নেই।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমান সরকার পতনের আন্দোলনে সক্রিয় আছি। বিএনপি কেন, সরকার পতনের আন্দোলনে অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে মাঠের রাজনীতিতে একাট্টা থাকবে জামায়াত।
জেইউ/এমএআর/