শনিবার বিক্ষোভ, রোববার হেফাজতের হরতাল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে দেশের দুই স্থানে সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী নিহতের ঘটনায় শনিবার (২৭ মার্চ) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং রোববার (২৮ মার্চ) হরতালের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এ ঘোষণা দেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেফাজতে ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিনী।
চট্টগ্রামে নিহত ৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রবিউল ইসলাম (২৩), মেরাজুল ইসলাম (২২) মিরাজুল ইসলাম, জামিল (২০) ও মিজান (৪০)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
আহতদের মধ্যে ইব্রাহিম খলিল (২৫), ইমরান হোসেন (২৪), ইমাম উদ্দিন (২২), বেলাল হোসেন (২২) ও সাইফুল ইসলাম (২৪) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
এএসআই আলাউদ্দিন জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজন মাদরাসাছাত্র ও একজন স্থানীয় দর্জির দোকানে কাজ করতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত ১
মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়াও। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা সদরের বিভিন্নস্থানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। বিক্ষোভের ঘটনায় আশিক (২০) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়। নিহত আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার সাগর মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে বিক্ষুব্ধ মাদরাসাছাত্ররা জেলা শহরের কাউতলি এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২নং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। এ সময় পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে। এ ঘটনায় আশিক এবং পুলিশ পরিদর্শক নূরে আলমসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আশিককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক নূরে আলমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এটি গুলির কিনা সেটি স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক অবরোধ
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ যাত্রাবাড়ীর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেও বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম কাজল। তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী মাদরাসার সামনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। ফলে আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে এর প্রতিবাদে নেমে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে হওয়া এ সংঘর্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।
আহতদের বেশিরভাগই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকর্মীও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে আটজন সাংবাদিকও আহত হন বলে জানা গেছে।
এএইচআর/ওএফ