ভোটের পরিবেশ নিয়ে যা বললেন মেয়র প্রার্থীরা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে লড়াই মূলত তিন প্রার্থীকে ঘিরে। প্রচার-প্রচারণা শেষে এখন ভোট গ্রহণের পালা। তার আগে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি শঙ্কা-আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দুই মেয়র প্রার্থী। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বলছেন ভিন্ন কথা।
ভোটের আগের রাতে নৌকার মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, নির্বাচন শতভাগ সফল হবে। তবে স্বতন্ত্র দুই মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সাক্কু মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন দেখানোর জন্য আইন প্রয়োগ করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট লুটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) লুটেরাদের ভোট চুরিতে সহযোগিতা করবে না, এটা জনগণ দেখতে চায়।
সাক্কুর অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী রিফাত বলেন, কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ তারা করবেন না। ভোট শতভাগ সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো অবস্থাতেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট করব না। জনতা যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। আমি কথা দিতে পারি কোনো সমস্যা হবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে সবাই ঐক্যবদ্ধ। যারা মনোনয়ন চেয়ে পায়নি তাদের মান-অভিমান ছিল। কিন্তু এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ।
বিভক্ত আওয়ামী লীগকে আপনার পক্ষ থেকে ভোটের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন কি— জানতে চাইলে রিফাত বলেন, অবশ্যই বলেছি। তার চেয়েও বড় কথা হলো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নৌকা তো আমার ব্যক্তিগত নয়, এটা সবার।
নির্বাচনে সহিংসতার প্রমাণসহ অভিযোগ এলে দায়-দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেবেন বলে জানান নৌকার এ মেয়র প্রার্থী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু বলেন, আজ বুধবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আইনটা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। দেখানোর জন্য আইন প্রয়োগ করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নিয়ে অনেক ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছি। ইভিএম নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন ভয় না থাকলেও কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না, সেই ভয়টা কাজ করছে।
নির্বাচনের প্রচারণার সময় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোটারদের মধ্যে টাকা ছড়িয়েছেন— আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের এমন অভিযোগের পাল্টা জবাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সদ্য সাবেক হওয়া কুসিক মেয়র বলেন, টাকা ছড়িয়েছি সেই প্রমাণ দেখান আগে।
সাক্কু বলেন, এমন অভিযোগ আমিও তুলতে পারি। রিফাত ভাই ভোটের মাঠে টাকা ছড়িয়েছেন। কিন্তু প্রমাণ তো নেই। তাই প্রমাণ নেই এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। আমি টাকা ছড়িয়েছি সেই প্রমাণ তো দেখাতে হবে।।
তিনি এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট লুটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) লুটেরাদের ভোট চুরিতে সহযোগিতা করবে না, এটা জনগণ দেখতে চায়।
তিনি বলেন, ভোট লুট করতে দেব না। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত মাঠে থাকব। মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাকে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারবে না।
এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, কুমিল্লার মানুষকে দানবীয় শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য যখন মাঠে নেমেছি তখন আমাকে ঠেকানোর জন্য, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য, নৌকা প্রতীকের ডামিপ্রার্থী (দেয়াল ঘড়ির প্রার্থী) গুজব ছড়াচ্ছেন। কিন্তু আমি নির্বাচনের ফলাফল নিয়েই ঘরে ফিরব। ঘোড়ার জয় হবেই।
‘কুমিল্লার রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন’— জানিয়ে কায়সার বলেন, ‘জনতা আমার সঙ্গে আছে, গণজোয়ার আমার সঙ্গে আছে। কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। আর পরিবর্তনের প্রতীক হচ্ছে ঘোড়া। ঘোড়ার জয় হলে জনতার জয় হবে। জনতার জয় হলে যে রায় আসবে, সেই রায় আমি মেনে নেব।’
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ২৫ বছর ধরে কথা বলছি— দাবি করে স্বতন্ত্র এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘আমি নতুন কুমিল্লা গড়ার আশ্বাস দিয়েছি। যেখানে থাকবে না কোনো দুর্নীতি, মাদক। কুমিল্লা হবে আমার, আপনার, আমাদের সবার। কোনো এক ব্যক্তির কুমিল্লা হবে না।’
নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা আমার নেই। টাকা-পয়সা না থাকায় কালো টাকা ছড়ানোর সুযোগও নেই। তবে তাদের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। তারা যদি শত কোটি টাকা ছড়ায়, সেগুলো তো কুমিল্লার মানুষের টাকা। এই টাকা গ্রহণের জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। যাকে কালো টাকা দেওয়া হবে নিয়ে নেবেন। কিন্তু ভোট পরিবর্তনের জন্য দেবেন।’
‘ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থন আছে নিজের পক্ষে’— দাবি করে কায়সার বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির সমর্থন নিয়ে নৌকা ও দেয়াল ঘড়ির প্রার্থীর চেয়েও বেশি ভোট পাব।’
‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’— ভোটারদের এটা আশ্বস্ত করানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান এই মেয়র প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুবারের মেয়র) ও মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ প্রার্থী আছেন ভোটের মাঠে। নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০জন। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।
ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। সবচেয়ে কম ভোটার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, তিন হাজার ৮৯৪ জন।
এইউএ/এসএসএইচ