রিফাতের সন্দেহ কুমিল্লা আওয়ামী লীগে!
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। যারা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না বলে সন্দেহের তির ছুড়েছেন তিনি। তবে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরা দাবি করেছেন, তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এবং এটা চালিয়ে যাবেন।
আরফানুল হক রিফাত বলেন, কিছু অংশ যারা মনোনয়ন চেয়ে পাননি, তারা মন খারাপ করে বাসায় বসে আছেন। এছাড়া দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। কুমিল্লা শহরের যারা ভোটার আমি সবার ভোট প্রত্যাশা করছি। সবার কাছে ভোট ও দোয়া চাচ্ছি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৫ জন। তারা হলেন- কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আফজল খানের মেয়ে ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, আফজল খানের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগে সাবেক সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরকানুল হক রিফাত, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শফিউর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাকির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য, চট্টগ্রামের রাউজান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস কাজী ফারুক আহমেদ, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মো. কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর উপ-কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান ও শহিদুল ইসলাম শিকদার।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে ১১ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের কারণেই তার পরাজয় হয়
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা সর্বশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে ১১ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের কারণেই তার পরাজয় হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি ধারা। কুমিল্লা শহরে পদ-পদবিতে থাকা নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। এই গ্রুপের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এই প্রার্থীর বাক্সে বিরোধী গ্রুপের ভোট পড়বে কি না, তা মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী গ্রুপের ভোটের সংখ্যা কম হলেও এই ভোটগুলো নৌকার জয়ের জন্য জরুরি।
ওই নেতা আরও জানান, আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বিরোধীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তাদের অনুসারী হিসেবে সামনে থেকে মহানগরে রাজনীতি করেন প্রয়াত আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, শহর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আনিসুল ইসলাম মিঠু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নুরুর রহমান তানিম, শফিকুল ইসলাম শিকদার, কবিরুল ইসলাম শিকদার। তাদের অবস্থান নিয়ে কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বাহারবিরোধী নেতারা প্রকাশ্যে মিটিং-মিছিল ও নৌকার পক্ষে গণসংযোগে উপস্থিত থাকলেও ভোটকেন্দ্রে নৌকায় সিল মারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, দুই গ্রুপের মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই দ্বন্দ্ব তারা কি ভুলতে পেরেছে— এই আলোচনা এখন জমে উঠেছে কুমিল্লার ভোটের মাঠে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আফজলপুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা সবাই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে উঠে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছি।’
জানতে চাইলে নুরুর রহমান তানিম বলেন, ‘যাদের এক নেতা এক কর্মী, তারা ঐক্যবদ্ধ হলেই কী, না হলেই বা কী? নৌকার প্রার্থীর জন্য কাজ করছি, করে যাব।’
এইউএ/এমএআর/