স্বাধীনতার সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য

পৃথিবীতে অনেক দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়েছে। ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মুক্ত হয়েছে, বিজয় অর্জন করেছে। লিখলাম ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন বিসর্জন আর দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, কত সহজে বাক্যটি লিখলাম; কিন্তু চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন তো কেমন ছিল সেই পৈশাচিক বেদনাপ্লুত অপমানে জর্জরিত নিজ বাসভূমে হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তগুলো!
বিজ্ঞাপন
অনুভব করুন, যখন কোনো ঘর, বাড়ি, বাসা বা উঠোন থেকে কন্যা, জায়া, জননীদের স্বামী পুত্রদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে, সেই করুণ আর্ত চিৎকারের বিষাক্ত হাওয়া কী আজও বাংলার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ভেসে বেড়ায় না?
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি বিন্দু মাটিতে একাত্তরের মানুষের রক্তের দাগ রয়েছে। সেই সময়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মধ্যে গুটিকয়েক ছাড়া অধিকাংশ বাঙালিই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে দানবদের সঙ্গে, ক্ষুদ্র প্রাণে। বাংলার পথে ঘাটে মাঠে প্রান্তরে ঘটেছে অজস্র ঘটনা—সবই ছিল অবিশ্বাস্য এবং বিয়োগান্ত।
বিজ্ঞাপন
মানুষের জীবন যেমন ধ্বংসমুখী, বিপরীতে প্রবলভাবে সৃষ্টিশীলও। যুদ্ধের ব্যাংকারে বসে যখন যোদ্ধারা লিখেছেন চিঠি মায়ের কাছে, পিতার কাছে, ভাই বা স্ত্রীর কাছে, একেকটা চিঠি ছিল হৃদয় নিংড়ানো শিল্পময়তার সংসার। যেসব কবি লেখকেরা দখলকৃত বাংলায় জীবন নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, তারাও গভীর গোপনে লিখেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ।
যুদ্ধের মধ্যে, ধ্বংসের মধ্যে, হাহাকারের মধ্যে যে শিল্প গড়ে ওঠে, সেই শিল্পে যেমন বেদনা রক্ত থাকে, তেমনই থাকে প্রাণের তীব্র আকুলতাও। ১৯৭১ সালে দাঁতাল দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর নির্মম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়লে, প্রাণের তাগিদে প্রায় দেড় কোটি বাঙালি প্রতিবেশী ভারতের নানা রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নেয় পশ্চিমবঙ্গে এবং কলকাতায়। কলকাতা যেহেতু প্রাচীন শহর, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কলকাতার বন্ধন ও যোগাযোগ ঐতিহাসিককাল থেকে, তাই লেখক শিল্পীরা দলে দলে ভিড় জমান কলকাতায় এবং কলকাতায় সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের শিল্পের প্রথম সোপান। পুঁথিঘর লিমিটেডের কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহাও জীবনের সন্ধানে পালিয়ে কলকাতায় চলে গেলেন।
তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, বাংলাদেশ তো একদিন স্বাধীন হবেই কিন্তু সেই স্বাধীনতার অপেক্ষা না করে শিল্প সাধনায় মগ্ন হওয়া। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে তিনি ‘মুক্তধারা’ নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করে ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নামে বই সম্পাদনার দায়িত্ব দিলেন।
কর্মবীর আনিসুজ্জামান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পশ্চিমবাংলা এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশের লেখকদের লেখা সংগ্রহ করে বইটি সম্পাদনা করলেন।
যুদ্ধের মধ্যে, ধ্বংসের মধ্যে, হাহাকারের মধ্যে যে শিল্প গড়ে ওঠে, সেই শিল্পে যেমন বেদনা রক্ত থাকে, তেমনই থাকে প্রাণের তীব্র আকুলতাও।
আহমদ ছফা, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতনামা বাঙালি লেখক সেই ‘রক্তাক্ত বাংলা’ বইয়ে লিখেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা ট্রাক বোঝাই করে সেই বই বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং বাংলার জনগণের কাছে বিনামূল্যে বিলি করেছিলেন।
বলা যায়, স্বাধীন রক্তাক্ত বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প ইতিহাসের সঙ্গে চিত্তরঞ্জন সাহা এবং মুক্তধারা এভাবেই জড়িয়ে গেছেন। মনে রাখা দরকার চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই আজকের মহিমান্বিত অমর একুশের বইমেলারও সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭২ সালে।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েই রক্তঅশ্রুরোদনে ভরা প্রথম উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ রচনা করেছিলেন আনোয়ার পাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল স্বায়ত্তশাসন স্বাধিকার স্বাধীনতার মূল কেন্দ্র। ছাত্র জনতার ঐকতানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিল বাঙালির ভরসা ও আশার আলো।
সে কারণেই দখলদার পাকিস্তানির সব আক্রমণের আক্রোশ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্থাপনা প্রায় গুড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চিরায়ত বাঙালির সাহস আর নিবেদন ধারণ করে বাংলার অধ্যাপক আনোয়ার পাশা লিখলেন অমর উপন্যাস—রাইফেল রোটি আওরাত। অনেকটা কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার লাইনের মতো অধিষ্ঠান নিয়ে—‘জাহান্নামে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি’।
‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাসের ভূমিকায় কাজী আবদুল মান্নান লেখেন—“সেকালের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে বসে লেখা আমাদের সমগ্র ইতিহাসে একটি মাত্র উপন্যাসই পাওয়া যায়—এ উপন্যাস হচ্ছে, ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস এর রচনাকাল। লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা নিহত হলেন ১৯৭১ সালেরই ১৪ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা লাভের মাত্র দুদিন আগে তিনি যে অমর কাহিনী উপন্যাসে বিধৃত করেছেন নিজেই হয়ে গেলেন তারই অঙ্গ চিরকালের জন্য।”
‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাস থেকে—‘সর্বত্রই হানাদারদের কার্যক্রমের মধ্যে এই একটা মিল ছিল ভারি সুন্দর। যা পার লুটে নাও, যুবতীদের হরণ কর, অন্যদের হত্যা কর। না, সব ঘরেই তারা ঢোকেনি। কিন্তু যেখানেই ঢুকেছে এই কার্যধারার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যতিক্রম ঘটেছিল শুধু সুদীপ্তর ঘরে। সেখানে হরণের জন্য নারী পায়নি, লুটপাটের যোগ্য কোনো বস্তুও পায়নি। কেননা যেদিকে তারা তাকিয়েছিল শুধু দেখেছিল বই। আর বই। ধুত্তোর বই। বই নিয়ে হবেটা কী শুনি! কাগজের বুকে হিবিজিবি আঁক কাটা যতো আবর্জনা। ওই আবর্জনায় হাত দিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা না পাক হতে চায়নি। হাত যেখানে সেখানেই দেওয়া যায় নাকি? হাত দেওয়া যায় রোটি ও রাইফেল। আর আওরাতের গায়ে। দুনিয়ার সেরা চিজ আওরাত, আওর রাইফেল। রোটি খেয়ে গায়ের তাকত বাড়াও, রাইফেল ধরে প্রতিপক্ষকে খতম কর, তারপর আওরাত নিয়ে ফূর্তি কর। ব্যাহ, এহি জিন্দেগী হ্যায়। এইতো জীবন!’ [পৃষ্ঠা ৭০-৭১]
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহে ছোটগল্প অর্জন করেছে বিশিষ্ট মাত্রা। আগেই লিখেছি, ১৯৭১ সালে বাঙালির মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে কোটি কোটি ঘটনার জন্ম হয়েছে। সেইসব ঘটনার বিচিত্র প্রবাহ থেকে অভিজ্ঞতার নির্যাসে স্বাধীন বাংলাদেশের গল্পকারেরা অসাধারণ গল্প লিখেছেন। এখনো লিখছেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে তারা লিখেই যাবেন। আমার ধারণা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা কখনো শেষ হবে না।
আরও পড়ুন
অনুমান করি, হয়তো হাজার দুয়েক ছোটগল্প লেখা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের আলোয়। এ এক বিস্ময়। যদি দুই হাজার গল্প এক জায়গায় রাখা যায়...ছোটগল্পের বিচিত্র অনুষঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিচিত্র ঘটনা ফুটে উঠবে।
মোজাম্মেল হক নিয়োগী বাংলা কথাসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক। গল্প, উপন্যাস, শিশু সাহিত্য মিলিয়ে প্রকাশিত বই দেড় শতাধিক। মুক্তিযুদ্ধ মোজাম্মেল হক নিয়োগীর গভীর অনুরাগের শিল্প সাধনার জায়গা। মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করে ইতিমধ্যে ত্রিশটির মতো গল্প লিখেছেন তিনি। ‘কবিয়াল’ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে অনন্য গল্প মোজাম্মেল হক নিয়োগীর।
একাত্তর সালে হারুন যুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসে বাস্তুভিটার সামনে যখন দাঁড়ায়, কী দেখতে পায়? সেই সময়ে অজস্র মুক্তিযোদ্ধা হারুনের মতো এমন দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা তুলে ধরেছেন গল্পকার স্পষ্ট অঙ্গিকারে—‘স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হারুন। চুলদাড়িতে একাকার। চেনার উপায় নেই। গ্রামের মানুষ এসে ভিড় করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখার জন্য। হারুন কারো দিকে তাকাতে পারে না। তার চোখ পাথরের মতো নিশ্চল। শুকনো। অশ্রুহীন। ক্রন্দনহীন। পাশে বাড়ির এক বৃদ্ধ চাচা হাউমাউ করে কেঁদে বলল, সব শ্যাষ বাজান। তোর মায়েরা ওরা এইহানে, এইহানে কুদরত আলি গুলি করল। ওই যে ওইহানে তিন দিন পর আমরা কব্বর দিলাম। লতিফার বাপেরও মাইর্যা ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিছে। লতিফারে ক্যাম্পে ধইর্যা নিছিল। গ্রামের আরও মানুষ বিভিন্ন বার্তা দেওয়ার প্রাক্কালে কবিয়াল পাথরের মূর্তি, নির্বাক, স্থবির কেবল গ্রামের মানুষের কথা শুনেছে।
গ্রামের মানুষের কাছে, এমনকি লতিফার বাবার কাছেও সে নিগৃহীত হলেও হারুন তার প্রেমকে ভুলতে পারেনি। গ্রামের অনেক মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে লতিফাকে বিয়ে করে। পুরোনো শূন্য ভিটায় ঘর বেঁধে ওদের জীবন শুরু করে। স্বাধীন দেশে যেন সবকিছুই নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।’
কবিতা শিল্প বিশ্বের নিবিড়তম গভীর বোধের আশ্রয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী ও রক্তপাত কবিদের মন ও মননে বিষাদ বিষক্রিয়া তৈরি করেছে, যে বোধ তারা কবিতায় তুলে ধরেছেন মমতার সংগ্রামে। ধারণা করা যায়, কবিতা লেখা হয়েছে হয়তো কয়েক হাজার অথবা অগণন।
আহমদ ছফা, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতনামা বাঙালি লেখক সেই ‘রক্তাক্ত বাংলা’ বইয়ে লিখেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা ট্রাক বোঝাই করে সেই বই বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং বাংলার জনগণের কাছে বিনামূল্যে বিলি করেছিলেন।
আবুল হাসান বাংলা কবিতার চিরকালের কবি। আবেগ ও অনুভবে তিনি ছিলেন দুঃখ প্রেরণার মহান তীর্থ। কবিতায় বুনে তুলেছেন রক্তাক্ত বাংলাদেশের মানচিত্র। ‘উচ্চারণগুলি শোকের’ কবিতায় তিনি একাত্তরের বাংলাদেশকে জাগ্রত করে রেখেছেন উপমা ছন্দে আর উৎপ্রেক্ষার অনুপম অনুরাগে—
‘লক্ষ্মী বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখি না,
হাঁটি হাঁটি শিশুটিকে কোথাও দেখি না;
কতগুলি রাজহাঁস দেখি,
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখি না
শিশুটিকে কোথাও দেখি না।
তবে কি বউটি রাজহাঁস
তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?
অনেক যুদ্ধ গেল
অনেক রক্ত গেল
শিমুল তুলোর মতো সোনা-রুপো ছড়াল বাতাস।
ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,
নরম নোলকপরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখি না।
কেবল পতাকা দেখি,
কেবল পতাকা দেখি,
স্বাধীনতা দেখি!
তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদিতে উৎসব?’
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্বর দখলদার পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে মার্কিন সরকার। কিছু মার্কিন জনগণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে। সেই সময়ের বিশিষ্ট মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তাদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি কলকতায় বাঙালির দুর্দশাগ্রস্ত শরণার্থীদের দেখতে আসেন। কলকাতা থেকে তিনি আসেন যশোরে, যশোর রোডের পরিস্থিতি দেখে বেদনায় আপ্লুত হয়ে লেখেন অনবদ্য কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। এই কবিতায় কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ বাঙালির দুঃখ ও বেদনার পাঁচালী, যা আজও অনেক দিনরাত্রি বাঙালির আত্মা প্রতিধ্বনি হয়ে বাজবে—
শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত মানুষের দল
যশোর রোডের দু’ধারে বসত
বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল
কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে
যুদ্ধে ছিন্ন ঘরবাড়ি দেশ
মাথার ভিতরে বোমারু বিমান
এই কালো রাত কবে হবে শেষ
শত শত মুখ হায় একাত্তর
যশোর রোড যে কত কথা বলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে
সময় চলেছে রাজপথ ধরে
যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর
গরুগাড়ি কাদা রাস্তা পিছিল...
গল্প, কবিতা, উপন্যাসের মতো প্রবন্ধ সাহিত্যও এক বিশাল জায়গা দখল করে আছে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ধারণ করে। প্রবন্ধের মধ্যে আমাদের প্রবন্ধকারেরা মুক্তিযুদ্ধের সব পরিপ্রেক্ষিত ধারণ করে, নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যুদ্ধের বিচিত্র উপাদান উপস্থাপন করেছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সংগ্রাম মুখর দিনের ঘটনাবলী—অত্যন্ত দক্ষতার মুকুটে লিখেছেন এবং লিখে চলেছেন। সেইসব গল্প, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ মুক্তিযুদ্ধের অনন্য সাক্ষ্য।
মনি হায়দার ।। কথাসাহিত্যিক