স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ : প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা
স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন প্রতিষ্ঠা ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই রোডম্যাপের চারটি পিলার হচ্ছে—১) স্মার্ট সিটিজেন, ২) স্মার্ট সোসাইটি, ৩) স্মার্ট ইকোনমি ও ৪) স্মার্ট গভর্ন্যান্স। সরকারের পরবর্তী ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ—২০৪১’ বাস্তবায়নে ১৪টি কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত এসেছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর তৃতীয় সভা থেকে; যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ১৪টি সিদ্ধান্তসহ সভার কার্যপত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন। ওই সভায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ রূপকল্পের আওতায় যেমন ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল কৃষি ইত্যাদি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ এর আওতায় প্রধান অঙ্গ হবে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য, স্মার্ট পরিবহন ইত্যাদি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২২ সালের সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড, গ্রিন ইকোনমি, দক্ষতা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং নগর উন্নয়নে কাজ করছে। শহরে বসবাসরত মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন
আইসিটি বিভাগ জনবান্ধব সেবা প্রদানে ইতিমধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় সরকার ও আইসিটি বিভাগ সাধারণ মানুষের আশা পূরণে সামনের দিনে সম্মিলিতভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারে। স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নে নির্ধারিত এলাকার বসবাসরত জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এলাকার জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।
হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়্যারকে একসাথে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে হিউম্যানওয়্যার তথা মানুষকেই আসল ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় সকল প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্ভব হবে না। আর একজন সত্যিকারের মানুষ তৈরির জন্য তাদের কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না, তাদের মানবিক মানুষ হিসেবেও তৈরি করতে হবে।
ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হবে পরবর্তী উন্নয়নের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ছাড়া স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট টেকনোলজি কোনোটাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালেই পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ফাইভজি সেবা চালু করা হয়েছে এবং এরইমধ্যে ফাইভজি কানেক্টিভিটি সেবা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে।
স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে আমাদের ফাইভজি কানেক্টিভিটির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে স্মার্ট সিটির কনসেপ্ট বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই লক্ষ্যে সবার ঢাকা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে করা ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৬৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ডিএনসিসিতে ৪৮ হাজার স্মার্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে; যা মোবাইল ফোন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব লাইটের আলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হচ্ছে। অনলাইনে ট্যাক্স আদায় শুরু হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ২৮ হাজার বাসা-বাড়িকে সার্ভের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটি এর মাধ্যমে ২,৩৫০টি স্থানে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নাগরিক সেবার সব কার্যক্রমকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সাথে সাথে এর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েটে এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নয়নের জন্য এগ্রিকালচার, পাওয়ার এবং অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট এগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে কাজ করছে।
স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট এগ্রিকালচার। স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য ন্যানো টেকনোলজি এবং এআই ব্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক কতটুকু সার ও ওষুধ দেওয়া লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারে আগামী দুই বছরে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন
উচ্চ ফলনশীল ধান চাষাবাদের মাধ্যমে আগামীতে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে। ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এবং আমদানি না করতে হলে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ।
২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালা থেকে পাওয়া সংশ্লিষ্টদের সুচিন্তিত মতামত, উপদেশ ও সুপারিশ ভবিষ্যতে আমাদের পথ দেখাবে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
স্মার্ট সিটি বলতে এমন এক নগরায়ন বোঝায় যেখানে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিত করে কোনো একটি শহরের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য উন্নততর জনবান্ধব সেবা প্রদানে আধুনিক প্রযুক্তিগুলো কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট সিটিতে অনেকগুলো উপাদান থাকলেও বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি কাঠামোতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, জননিরাপত্তা, ইউটিলিটি এবং নগর প্রশাসনসহ মোট ৫টি উপাদান এবং পরিষেবাকে মোটা দাগে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্মার্ট ভিলেজ বলতে এমন এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বোঝায় যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্মুক্ত উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় নাগরিকরা বিশ্ব বাজারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিভিন্ন সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে উন্নত করা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশে স্মার্ট ভিলেজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর তৃতীয় সভায় স্মার্ট বাংলাদেশের একটি কৌশলপত্র বা রূপরেখা তৈরির কথা বলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের বৈঠকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার পরামর্শ এবং নির্দেশনায় স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য কাজ চলছে। উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশে তা এবারই প্রথম।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হবে। এই ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। ইনকিউবেটরে বিটিসিএলের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনে একটি স্টার্টআপ জোন, ইনোভেশন জোন, একটি এক্সিবিশন সেন্টার, একটি ই-লাইব্রেরি জোন, একটি ডেটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং রুম এবং একটি কনফারেন্স রুম রয়েছে। রপ্তানি ক্ষেত্রে এটিই হবে সব থেকে বড় পণ্য, যা আমরা রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এই স্থাপনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রচারাভিযান থেকে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরের নতুন ধাপ।
আরও পড়ুন
ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ আজ বাস্তবতা। এই ধারাবাহিকতায় জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগ ও আওতাধীন সংস্থাসমূহ দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনার জোগান এবং স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কারে ভূষিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে হাইটেক পার্কের সংখ্যা ৩৯টি। জননেত্রী শেখ হাসিনা মুঠোফোনের একচেটিয়া বাণিজ্য ভেঙে তা মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। ২০১৫ সালে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার শিল্প উৎপাদনকারীদের ভর্তুকি, প্রণোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে দেশে হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, মাই ফোন, শাওমিসহ দেশি-বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মুঠোফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং দেশের মুঠোফোনের চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করছে।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব লাভ করার আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি এমবিপিএস ৬০ টাকা। জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্পব্যয়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র উদ্বোধন করেন; যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার নামে পরিচিত। এই সেন্টার থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষ খুব সহজেই তাদের পরিচিত পরিবেশে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন।
বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৩০০ এর অধিক ধরনের সরকারি ও বেসরকারি সেবা জনগণ গ্রহণ করতে পারছেন। দেশে বর্তমানে মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক। ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার প্রকল্পের আওতায় দেশে একটি সমন্বিত ও বিশ্বমানের ডেটা সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গৃহীত আইনি ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তির ওপর তৈরি করা সূচকে বাংলাদেশ আইটিইউতে ৫৩তম স্থানে এবং এনসিএসআই বা জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।
আরও পড়ুন
৫২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটের জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত রয়েছে ৯৫ লাখেরও অধিক বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট এবং ৬৮৫টির বেশি ই-সেবা সহজেই মানুষ অনলাইনে পাচ্ছেন। ৮ হাজার ২৮টি ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০ কোটির অধিক এবং জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এর মাধ্যমে ৭ কোটির বেশি সেবা দেওয়া হয়। ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও মাইগভ থেকে প্রতি মাসে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭৫ লাখ। ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও দেশে ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আইসিটি রপ্তানি ২০১৮ সালেই ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। ৩৯টি হাইটেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ইতিমধ্যে নির্মিত ৯টিতে দেশি-বিদেশি ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়েছে ৩২ হাজার।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন ট্যাব ব্যবহার করে গণনাকারীর কাছে তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন।
সরকারের বর্তমান রক্ষ্য ২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত এবং সরকারি সেবার শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা। আরও ৩০০ স্কুল অব ফিউচার ও ১ লাখ ৯ হাজার ওয়াই-ফাই কানেকটিভিটি, ভিলেজ ডিজিটাল সেন্টার এবং ২৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের যে ভিত্তি তৈরি করে গেছেন, সেই পথ ধরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার এক উন্নয়ন দর্শন। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ও একদিন বাস্তবায়ন হবে, এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
ড. মো. মোরশেদুল আলম ।। শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়