জনপ্রতিনিধি নাকি জনপ্রিয় প্রতিনিধি?
বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধি যেমন আছেন জনপ্রিয় প্রতিনিধিও আছেন। যিনি সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি, জনগণের ভোটে যিনি নির্বাচিত তিনি অবশ্যই নিজ নিজ এলাকায় কাজ করবেন। এই জন্যই এলাকার জনগণ তাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।
দুঃখের বিষয় হলো, অনেকে জনপ্রতিনিধিই এখন এলাকায় যান না। তাদের দেখাও পাওয়া যায় না। তারা এত জনপ্রিয় যে, তাদের সাথে কেউই দেখা করতে পারেন না। এলাকার জনগণ তাদের নাম শুনেছেন কিন্তু তাদের দেখা পান না। এমন কি হওয়ার কথা ছিল? নিশ্চয় না।
আমি জনপ্রতিনিধি নয় জনপ্রিয় প্রতিনিধিও নই। আমি সাধারণ মানুষ। সহজভাবে আমি বুঝি, জন্মের পরে যে জন্মস্থান পেয়েছি মৃত্যুর আগে এরচেয়ে ভালো জন্মস্থান রেখে যেতে চাই। ভালো জন্মস্থান যদি রেখে যেতে চাই তাহলে কী করতে হবে? নিজ এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন : রাজনীতি কি মরণ খেলা?
আমি আমার সক্ষমতা দিয়ে ৩৯টা ব্রিজ বানিয়েছি। আমি অনেকগুলো রাস্তা সংস্কার করেছি। আমার এলাকায় ফুটবলের গণজাগরণ তৈরি করেছি। সবই কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ের কাজ।
আপনারা সবাই জানেন যে, একটা এলাকার জন্য ব্যক্তি কিন্তু যথেষ্ট না। আপনি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা যদি না পান তাহলে এলাকায় বেশিদূর কাজ করতে পারবেন না। একা চাইলেও এগিয়ে নিতে পারবেন না।
একজন জনপ্রতিনিধি যদি এমপি হতে নাও পারেন তাতেও এলাকার কাজ বন্ধ থাকার কথা নয়। যদি তিনি নিজের এলাকা ভালোবাসেন তবে যেকোনো প্রক্রিয়ায় কাজ করবেন এইটাই স্বাভাবিক ঘটনা।
আমার বক্তব্য সরল। কাজের মাধ্যমে একটি এলাকা এগিয়ে নিতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা আমি ব্যবহার করতে চাই। একজন এমপি এলাকার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রকল্প পাস করা থেকে শুরু করে সরকারি সহযোগিতা সবকিছু তিনিই নিয়ে আসেন, যেন এলাকার উন্নয়ন হয়।
একজন জনপ্রতিনিধি যদি এমপি হতে নাও পারেন তাতেও এলাকার কাজ বন্ধ থাকার কথা নয়। যদি তিনি নিজের এলাকা ভালোবাসেন তবে যেকোনো প্রক্রিয়ায় কাজ করবেন এইটাই স্বাভাবিক ঘটনা। আদতে কি তাই হচ্ছে?
আরও পড়ুন : সহমতের রাজনীতি
যেকোনো মানুষ ব্যক্তিপর্যায়ে কাজ করতেই পারেন। ব্যক্তির সাথে যদি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয় তাহলে কাজের পরিধি দ্বিগুণ হয়। আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতার লোভ ছেড়ে প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি যদি নিজ এলাকায় কাজ করেন তাহলে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
একজন জনপ্রতিনিধি নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা দিয়ে মানুষের মন জয় করেন। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির নেই যে, জনপ্রতিনিধি এলাকায় কোনো কাজ করেননি অথচ তিনি জনপ্রিয়।
একজন জনপ্রতিনিধির রাজনৈতিক পদ-পদবি আবশ্যিক না। কিন্তু তিনি যদি বৃহৎ স্বার্থে কাজ করেন পদ-পদবি তাকে কাজ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কিন্তু পদ-পদবি না পেলে যে কাজ করা যাবে না এইটা আমি বিশ্বাস করিনা।
একজন জনপ্রতিনিধি এক মাসে কতটুকু কাজ করেছেন, ছয় মাসে কতটুকু কাজ করেছেন, এক বছরে কী পরিমাণ কাজ করেছেন তা যদি জনগণ নাই জানে তাহলে তিনি কীসের জনপ্রতিনিধি?
যে জনপ্রিতিনিধি পদ-পদবির জন্য কাজ করেন তিনি কখনোই মানুষের উন্নয়নে কাজ করেন না। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করেন। তিনি আজকে এই কাজ করবেন কালকে ঐ কাজ করবেন, কোনো কাজই সার্বিকভাবে জনগণের উন্নয়নে আসবে না।
আরও পড়ুন : রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!
পদ-পদবি অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়। পদ-পদবি থাকলে আপনি একজন ইউএনওকে প্রশ্ন করতে পারবেন, ওসিকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন, থানার এসপিকে জিজ্ঞেস করতে পারবেন এবং তারা আপনাকে উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি যদি কাউকে ফোন দেই, তিনি আমার ফোন ধরতে পারেন নাও ধরতে পারেন। আমি তাকে কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারব না। সেই সক্ষমতাও আমার নেই।
আমার কাছে মানুষ যখন সমস্যা নিয়ে আসে তখন আমি সমাধানের কথা ভাবতে গিয়ে আটকে যায়, কারণ আমি ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করছি, একইভাবে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন বা রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি যদি জনগণের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন তবে তিনি অনায়াসেই তা সমাধান করতে পারেন।
এইখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার পর্যায়ে নিয়ে আসে। যেহেতু জনগণের ভোটে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন তাই প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিদের আমি মনে করি জবাবদিহিতার পর্যায়ে আনা উচিত।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন
একজন জনপ্রতিনিধি এক মাসে কতটুকু কাজ করেছেন, ছয় মাসে কতটুকু কাজ করেছেন, এক বছরে কী পরিমাণ কাজ করেছেন তা যদি জনগণ নাই জানে তাহলে তিনি কীসের জনপ্রতিনিধি?
পৃথিবী আগাচ্ছে। আমাদের পিছিয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এগিয়ে যাওয়ার প্রধান সহায়ক হলো তরুণদের কাজে লাগানো। তরুণদের কাজ লাগিয়ে সোনার বাংলা গড়তে কোনো বাধা নেই। আমাদের যে কর্মশক্তি সেই কর্মশক্তি তথা জনসংখ্যা যদি জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তাহলে দেশে আগাতে বাধ্য।
আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। তাই আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশ ভালো থাকা মানেই কিন্তু আমরা ভালো থাকা, দেশের জনগণকে ভালো রাখা।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।। আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট