কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গমাতা
‘কারাগারের রোজনামচা’ নামটি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জেল-জীবনচিত্র এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
গ্রন্থে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বাঙালি এবং বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী বিবিধ প্রকারের অমানবিক কর্মকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুর জেল-জীবনের যন্ত্রণা, কয়েদিদের অজানা বহু কথা, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তানি কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, শাসকের রক্তচক্ষুর নিচে গণমাধ্যমের অবস্থা, শাসক গোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের নির্মম নির্যাতন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা, বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র, বিশ্বাস ঘাতকতা, প্রকৃতি প্রেম, পিতৃমাতৃ ভক্তি, সন্তান বাৎসল্য ইত্যাদি বিবিধ বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
গ্রন্থে সকল স্থান ছাপিয়ে আছেন এক মহীয়সী নারী। তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর জীবনে পেছন থেকে ছায়া স্বরূপা হিসেবে তার অবদান অপরিসীম।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, পরম্পরায় বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের যে সকল তথ্য আমরা বঙ্গবন্ধুর আত্মলেখনীতে পাই তাই বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের অনুপ্রেরণাতেই সম্ভব হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তার বড় কন্যা শেখ হাসিনা বলেন,
‘আব্বার লেখা এই খাতার উদ্ধার আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধের ফসল। আমার আব্বা যতবার জেলে যেতেন মা খাতা, কলম দিতেন লেখার জন্য। বার বার তাগাদা দিতেন। আমার আব্বা যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন মা সোজা জেল গেটে যেতেন আব্বাকে আনতে আর আব্বার লেখাগুলি যেন আসে তা নিশ্চিত করতেন। সেগুলি অতি যত্নে সংরক্ষণ করতেন।’ (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ৯)
ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু যে পরিবেশ ও পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন, শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবও সেই একই পরিবেশে এবং একই পরিবারে বড় হয়েছেন। সম্পর্কে স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান তার চাচাতো ভাই ছিলেন।
শেখ ফজিলাতুননেছার পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতামহ শেখ আব্দুল হামিদ ছিলেন চাচাতো ভাই। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দ্বারা তিনি শিশুকাল থেকেই প্রভাবিত ছিলেন। এই আদর্শই তাকে করেছে সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী।
ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু যে পরিবেশ ও পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন, শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবও সেই একই পরিবেশে এবং একই পরিবারে বড় হয়েছেন। সম্পর্কে স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান তার চাচাতো ভাই ছিলেন।
শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেণু। তার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিতামাতা হারান। শিশুকালেই পিতামাতা হারিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুনের কাছে সন্তানের মতো বড় হতে থাকেন।
আরও পড়ুন : তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ?
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চিন্তার সহযোগী। তাদের দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল অসাধারণ। একজন অন্যজনকে সম্পূর্ণ বুঝতে পারতেন। যা খুব কমই দাম্পত্যজীবনে থাকে।
১৯৬৬ সালের ২৯ জুন। পরিবারের সকলেই কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে আসলেও, শারীরিক অসুস্থতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা এলেন না। তখন বঙ্গবন্ধু অনুভব করেন, তার স্ত্রী রেণু হয়তো অসুস্থ। যদি অসুস্থ না হতো তবে নিশ্চয়ই সে কারাগারে আসতো। কারণ সামান্য অসুস্থতায় সে ঘরে বসে থাকার মানুষ না।
‘ছেলেমেয়েরা চলে গেল। দেখলাম ওরা যেতেছে। মনে পড়ল নিশ্চয়ই রেণুর শরীর বেশি খারাপ নতুবা আসতো । সামান্য অসুস্থতায় তাকে ঘরে রাখতে পারত না। জেলের ভিতর চলে এলাম আমার জায়গায়। আমি তো একা আছি, এই নির্জন ইটের ঘরে। আমাকে একলাই থাকতে হবে। চিন্তা তো মনে আসেই।’ (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ১৩৫)
১৯৬৬ সালের ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু তার রোজনামচায় লিখেন, ছেলেমেয়েসহ স্ত্রী রেণুর প্রতীক্ষায় তিনি রাস্তায় তাকিয়ে থাকতেন। দাম্পত্যজীবনে তীব্র ভালোবাসা না থাকলে এমন হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার চিত্রগুলো আমরা বঙ্গবন্ধুর লেখনীতে পেতাম না।
আরও পড়ুন : রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!
“ভেবেছিলাম আজ রেণু ও ছেলেমেয়েরা দেখতে আসবে আমাকে। হিসাবে পাওয়া যায় আর রেণুও গত তারিখে দেখা করার সময় বলেছিল, ‘২০ বা ২১ তারিখে আবার আসব।' চারটা থেকে চেয়েছিলাম রাস্তার দিকে। মনে হতেছিল এই বোধহয় আসে খবর। যখন ৫টা বেজে গেল তখন ভাবলাম, না অনুমতি পায় নাই। আমিও ঘর থেকে বের হয়ে স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম ভীষণ গরমও পড়েছে। কিছু কিছু ব্যায়ামও করা শুরু করেছি। কারণ, রাতে ঘুম হয় না ভালভাবে। সন্ধ্যার পূর্বে কিছু বেগুন গাছ লাগালাম নিজের হাতে।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ১৭৩)
বঙ্গবন্ধু যখন মাঠে-ময়দানে সভা সমাবেশে থাকতেন সেই সময়ে এবং তার বারংবার কারাবাস কালে সম্পূর্ণ পরিবারকে বঙ্গমাতাই আগলে রাখতেন। তার সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বের কারণেই তিনি তা সফলতার সাথে পেরেছেন।
পাকিস্তানি শাসকের নোংরা কুরুচিপূর্ণ রাজনৈতিক হিংসার অভিঘাতে বঙ্গবন্ধু জেলে, পরিবার বিপর্যয়ের মধ্যে। ঠিক সেই সময়েই আমরা দেখতে পাই বঙ্গমাতা সকল দিক সামলে তার বড় মেয়েকে সুপাত্রস্থ করতে তৎপর।
আরও পড়ুন : ধর্ম যার যার থাকুক, উৎসব হোক সবার
"রেণু আমার বড় মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব এনেছে, তাই বলতে শুরু করল। আমার মতামত চায়। বললাম, ‘জেল থেকে কি মতামত দেব; আর ও পড়তেছে পড়ুক, আইএ, বিএ পাস করুক। তারপরে দেখা যাবে।' রেণু ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কতদিন যে আমাকে রাখবে কি করে বলব! মনে হয় অনেকদিন এরা আমায় রাখবে। আর আমিও প্রস্তুত হয়ে আছি। বড় কারাগার থেকে ছোট কারাগার, এই তো পার্থক্য।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ১৮১)
বঙ্গবন্ধু জেলে অন্তরীণ অবস্থায় এবং সরকার যদিও বঙ্গবন্ধুকে ব্যবসা করতে না দেয়, এরপরেও বঙ্গমাতা পরিবার ঠিকই চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এই বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর ছিল।
বঙ্গবন্ধু যখন মাঠে-ময়দানে সভা সমাবেশে থাকতেন সেই সময়ে এবং তার বারংবার কারাবাস কালে সম্পূর্ণ পরিবারকে বঙ্গমাতাই আগলে রাখতেন।
"সরকার যদি ব্যবসা করতে না দেয় তবে বাড়িতে যে সম্পত্তি আমি পেয়েছি আব্বার, মায়ের ও রেণুর তাতে আমার সংসার ভালভাবে চলে যাবে। রেণু বলল, ‘চিন্তা তোমার করতে হবে না।' সত্যই আমি কোনোদিন চিন্তা বাইরেও করতাম না, সংসারের ধার আমি খুব কমই ধারি।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২২২)
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন
বঙ্গমাতা একদিকে যেমন কর্মকুশল এবং কর্মতৎপর ছিলেন, অন্যদিকে ছিলেন সর্বদা চাপা স্বভাবের আত্মপ্রচারহীন। বুক ফেটে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করতেন না। স্ত্রীর চাপা স্বভাবের বিষয় বঙ্গবন্ধু খুব ভালো করেই জানতেন। তাই তিনি এই প্রসঙ্গে রোজনামচায় লেখেন,
"ছয়টা বেজে গিয়াছে, তাড়াতাড়ি রেণুকে ও ছেলেমেয়েদের বিদায় দিতে হলো রাসেলও বুঝতে আরম্ভ করেছে, এখন আর আমাকে নিয়ে যেতে চায় না। আমার ছোট মেয়েটা খুব ব্যথা পায় আমাকে ছেড়ে যেতে, ওর মুখ দেখে বুঝতে পারছি। ব্যথা আমিও পাই, কিন্তু উপায় নাই। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করে না।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২১১)
স্বামী শাস্তি হয়েছে জেনেও, নির্ভীক মনোভাবের ছিলেন বঙ্গমাতা। সামান্যতম ভীতি তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। "আজ ১৪ দিন হয়ে গেছে, রেণু তার ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখা করতে আসবে বিকাল সাড়ে চারটায়। চারটার সময় আমি প্রস্তুত হয়ে রইলাম। পৌনে পাঁচটায় সিপাহি আসলো আমাকে নিতে।
আজ তো আমি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, আইবি অফিসার আইনতভাবে আমরা যখন আলাপ করবো তখন থাকতে পারবে না। যেয়ে দেখলাম আইবি অফিসার ঠিকই এসেছে তবে কিছু দূরে বসে আছে। আমরা যে রুমে বসে আলাপ করবো সে রুমে বসে নাই। রুমে এলে আমি বাধ্য হতাম তাকে বের করে দিতে আর দিতামও। বহুদিন পরে ছেলেমেয়েদের ও রেণুর সাথে প্রাণ খুলে কথা বললাম।
আরও পড়ুন : অসাম্প্রদায়িক জাতির দেশ
প্রায় দেড় ঘণ্টা। ঘর সংসার, বাড়ির কথা আরও অনেক কিছু। আমার শাস্তি হয়েছে বলে একটুও ভীত হয় নাই, মনে হলো পূর্বেই এরা বুঝতে পেরেছিল। রেণু বলল, পূর্বেই সে জানতো যে আমাকে সাজা দিবে। দেখে খুশিই হলাম।
ছেলেমেয়েরা একটু দুঃখ পেয়েছে বলে মনে হলো, তবে হাবভাবে প্রকাশ করতে চাইছে না বললাম, ‘তোমরা মন দিয়ে লেখাপড়া শিখ, আমার কতদিন থাকতে হয় জানি না। তবে অনেকদিন আরও থাকতে হবে বলে মনে হয়। আর্থিক অসুবিধা খুব বেশি হবে না, তোমার মা চালাইয়া নিবে কিছু ব্যবসাও আছে আর বাড়ির সম্পত্তিও আছে। আমি তো সারাজীবনই বাইরে বাইরে অথবা জেলে জেলে কাটাইয়াছি তোমার মা'ই সংসার চালাইয়াছে’।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২৩৩)
বঙ্গমাতা একদিকে যেমন কর্মকুশল এবং কর্মতৎপর ছিলেন, অন্যদিকে ছিলেন সর্বদা চাপা স্বভাবের আত্মপ্রচারহীন। বুক ফেটে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করতেন না।
দেশ এবং জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে বঙ্গমাতাকে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনার যোগ্য অধিকারী ছিলেন বঙ্গমাতা।
"সন্ধ্যা হয়ে এলে ছেলেমেয়েদের চুমা দিয়ে ও রেণুকে বিদায় দিলাম। বললাম, ‘ভাবিও না অনেক কষ্ট আছে। প্রস্তুত হয়ে থাকিও।' ফিরে এলাম। একটু পরেই তালাবদ্ধ হয়ে গেল।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২৩৪)
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন
১৯৬৭ সালের রোজনামচায় দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিণী এবং চিন্তার সহযোগী হিসেবে বঙ্গমাতা অ্যাডভোকেটদের সাথে সকল প্রকারের যোগাযোগসহ কোর্টের সকল বিষয়ই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজেই দেখাশোনা করতেন।
"হাইকোর্ট থেকে একটা হুকুম পেয়েছি যে বক্তৃতার মামলায় জনাব মালেক প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সরকার হাইকোর্টে আপিল করেছেন। আগামী ২৯ তারিখে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানি হবে বলে নোটিশ পেয়েছি। কাগজটা পাঠাইয়া দিয়েছি রেণু'র কাছে এডভোকেটদের সাথে পরামর্শ করে যে কোনো একজন ভাল এডভোকেট দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে। এতগুলি বক্তৃতার মামলা দিয়েছে। দুইটায় সাজা হয়েছে, একটায় খালাস পেয়েছি, তার বিরুদ্ধেও আপীল করতে সরকারের কত উৎসাহ যদিও এডভোকেট সাহেবরা টাকা নেয় না, তথাপি নকল ও অন্যান্য খরচ বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হয়। জেলে আছি উপার্জন নাই। ছেলেমেয়েদের খুবই অসুবিধা হবে লড়তে হবে, উপায় কি? রাজনৈতিক কারণে মানুষ মানুষকে অত্যাচার করে তবে তার একটা সীমা আছে ও লজ্জা আছে। নিশ্চয়ই জনগণ বুঝতে পারে যে একটা লোককে ধ্বংস করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে।" (শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২৩৯)
আরও পড়ুন : মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আমাদের ভূমিকা
বঙ্গবন্ধুর কারাবাসকালে বাসায় বঙ্গমাতাই সভা পরিচালনা করে দল এবং কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেন।
"পাঁচটায় আবার গেটে যেতে হলো। রেণু এসেছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। হাচিনা পরীক্ষা ভালই দিতেছে। রেণুর শরীর ভাল না। পায়ে বেদনা, হাঁটতে কষ্ট হয়। ডাক্তার দেখাতে বললাম। রাসেল আমাকে পড়ে শোনাল, আড়াই বৎসরের ছেলে আমাকে বলছে, ‘৬ দফা মানতে হবে-সংগ্রাম, সংগ্রাম —চলবে চলবে–পাকিস্তান জিন্দাবাদ', ভাঙা ভাঙা করে বলে, কি মিষ্টি শোনায়! জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ও শিখলো কোথা থেকে?’ রেণু বলল, ‘বাসায় সভা হয়েছে, তখন কর্মীরা বলেছিল তাই শিখেছে।’ বললাম, ‘আব্বা, আর তোমাদের দরকার নাই এ পথের। তোমার আব্বাই ‘পাপের’ প্রায়শ্চিত্ত করুক।” শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৮: পৃ. ২৪৬-২৪৭)
বঙ্গবন্ধুর সকল কাজই সুদক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার কারণে পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু বঙ্গমাতার উপরে পড়ে। সেই রক্তচক্ষুকে হেলায় উপেক্ষা করেই নির্ভীক চিনতে এগিয়ে গিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব।
আরও পড়ুন : সম্প্রীতি ফিরে আসার প্রত্যাশায়
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, জগতে কোনো কালেই পুরুষ একা জয়ী হতে পারেনি। পুরুষের সেই মহিমান্বিত জয়ের পেছনে প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে তার সহযোগী বিজয়লক্ষ্মী নারী।
বঙ্গবন্ধুর জীবনেও আমরা এই বিষয়টির চরম দৃষ্টান্ত পাই। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রায় সকল কর্মের পেছনেই ছিলেন, তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। যাকে তিনি আদর করে রেণু বলে ডাকতেন।
তথ্য সহায়তা:
শেখ মুজিবুর রহমান, 'কারাগারের রোজনামচা', বাংলা একাডেমি, ঢাকা: এপ্রিল ২০১৮
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী ।। সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়