ক্রিকেট খেলা ঘিরে অনলাইন জুয়া : এক বছরে পাচার ৩০ কোটি টাকা
বিপিএল, আইপিএল-সহ অন্যান্য ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে চলছে অনলাইন জুয়া (বেটিং)। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত www.mazapbu.com ও www.betbuzz365.live নামক বেটিং ওয়েব সাইটের সুপার এজেন্টরা বাংলাদেশে নিয়োগ করে মাস্টার এজেন্ট। সুপার এজেন্টরা প্রতিটি পিবিইউ (ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকায় বিক্রি করে। আর দেশীয় মাস্টার এজেন্টরা লোকাল এজেন্টদের কাছে তা বিক্রি করে ১০০ টাকায়। ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় নিয়োগ করা হয় লোকাল এজেন্ট। তারা আবার লোকাল জুয়াড়িদের কাছে পিবিইউ বিক্রি করে দেড়শ টাকায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, এভাবে গত এক বছরে জুয়ার টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে।
অনলাইন জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ও অর্গানাইজ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারীদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা হলেন- তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও সুমন মিয়া (২৫)।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার তরিকুল ইসলাম বাবু ও রানা হামিদ বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট। তারা সুমন মিয়া, পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ জনের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট পরিচালনা করে আসছিল।
তারা বেটিং সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলেছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ও পলাতকরা অবৈধ জুয়ার (বেটিং) সাইট পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করেছে। এখানে কারেন্সি হিসাবে পিবিইউ এক প্রকার সাইটের নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি ব্যবহৃত হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেফতারদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল।
সিয়াম (Siyam ahmed) ও আলী (Ali Khan) ছদ্মনামে দুটি ফেক ফেইসবুক আইডি রয়েছে। যার মাধ্যমে এজেন্টরা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। বেটিং সাইটগুলো গ্রেফতার তিনজন ছাড়াও তাদের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ জনের পারস্পরিক যোগসাজশে পরিচালিত হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, জব্দকৃত ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, আইপিএল ও বিপিএলসহ মূলত ক্রিকেট খেলাকে ঘিরেই এই বেটিং সাইট পরিচালিত হয়। বেটিং সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিং এর পিবিইউ পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিং এর শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং বা অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে এর এডমিন রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্ধ করতে গেলে তারা অন্য সাইটে চলে যাবে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে এক সঙ্গে কাজ করব। মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে। তবে সামাজিকভাবে এটা প্রতিরোধে কাজ করা উচিত। কারণ যারা বেটিং এ অংশ নেয় তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এটা নেশার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিনদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
জেইউ/এইচকে