মুজিববর্ষ : ২৬ মার্চ বিশেষ কর্মসূচি পালন নিয়ে ভাবছে কমিটি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে ঘোষিত মুজিববর্ষের সময় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে পড়েছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। তাই নতুন করে কোনো কর্মসূচি নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
জানা গেছে, চলতি মাসের (জানুয়ারি) মধ্যেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসবে এ কমিটি। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুজিববর্ষ এবং এ সংক্রান্ত দুটি কমিটির মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২৬ মার্চ পড়েছে। এটি আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবসটিতে বিশেষ কোনো কর্মসূচি পালন করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
ওই সদস্য আরও বলেন, নতুন একটি কর্মসূচি পালন করতে হলে আগে থেকেই প্রস্তুতির প্রয়োজন। এছাড়া বাজেটেরও বিষয় আছে। কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উদযাপনের ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালনের পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষের সময় বাড়ানো হয়।
গত ৫ জানুয়ারি মুজিববর্ষের সময়কাল চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পাশাপাশি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ ও ‘জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র মেয়াদও বাড়ানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে নেওয়া কর্মসূচি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময়কাল গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল।
‘টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলা আয়োজন, অনলাইন কুইজের পুরস্কার বিতরণ, বিভিন্ন প্রকাশনা মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যাদি সম্পন্ন, নথিপত্র, অফিস সরঞ্জামাদি, প্রকাশনাসমূহ সরকার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর, আর্থিক বিষয়াদি নিষ্পন্ন করা, ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা, অডিট সম্পাদন ইত্যাদি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে মুজিববর্ষের সময়কাল এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি ও জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময়টা মাত্র বাড়ানো হলো। সামনের কর্মসূচি নিয়ে আমরা কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এ মিটিং চলতি (জানুয়ারি) মাসের মধ্যেই হবে।
‘প্রোগ্রামগুলো কী হবে, সেগুলো আমরা এখনও চূড়ান্ত করিনি। আমাদের কিছু কাজ বাকি আছে, আমরা সেগুলো করছি।’
তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের অনেকগুলো প্রকাশনা সামনে আসছে। সে কাজগুলো এখন আমরা করছি। বেশকিছু প্রকাশনা একসঙ্গে বের হবে। কিছু ইতোমধ্যে বের হয়েছে। আরও কিছুর কাজ চলছে।’
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কুইজ প্রতিযোগিতা করেছিলাম। কুইজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এখনও হয়নি। আমরা এ দুই বছর কী কী কাজ করেছি, সেগুলোর প্রতিবেদন তৈরি করছি। বর্তমানে এসব কাজ চলছে।’
২০২১ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ বিশিষ্ট অতিথিরা অংশ নেন।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে প্রতিদিন আলাদা থিম-ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও ভিজুয়াল ও অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’।
শেষদিনের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এছাড়া ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে সর্বশেষ ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশের মানুষকে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এছাড়া সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
শপথ : ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা।’
‘আজ বিজয় দিবসে দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না— দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা অনেক কাজ করেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রোগ্রামগুলো আমরা করেছি। ১০ দিনব্যাপী যে ঐতিহাসিক প্রোগ্রাম হয়েছে, তা আমাদের দেশে আগে আর হয়নি। এখানে অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সরাসরি উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা বাণীও দিয়েছেন। এটা একটা বিশাল অর্জন।’
ড. কামাল আবদুল নাসের আরও বলেন, ‘আমরা করোনার মধ্যেও অনেক বড় প্রোগ্রাম করতে পেরেছি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, করোনা থাকায় লকডাউন হয়েছে; কিছু প্রোগ্রাম আমরা সেভাবে করতে পারিনি। সেজন্য কিছু সময় পেয়েছি। আশা করছি প্রকাশনাসহ বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারব।’
এসএইচআর/এমএআর/