কমেছে অভিযোগ, বেড়েছে মামলা-চার্জশিট
করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি নাড়িয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। অদৃশ্য এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে চলছে প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু মিলছে না মুক্তি। ভিন্ন ভিন্ন রূপে হাজির হচ্ছে করোনা। মানুষের সব চেষ্টা যেন ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তারপরও আশা, এক দিন হয়তো ঠিকই মুক্তি মিলবে। কিন্তু ‘দুর্নীতি’ নামের ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে কি? নিশ্চিত করে কেউ তা বলতে পারছেন না।
নানা রঙ আর কৌশলে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির বিষ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বিদায় নিতে যাওয়া ২০২১ সালেও এর তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
কোভিড- ১৯ প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় বছরেও (২০২১ সাল) অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান, অনুসন্ধান ও তদন্তে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের (২০২১ সাল) পুরো সময়জুড়ে অভিযোগের সংখ্যা কমলেও দুদকের দায়ের করা মামলা ও চার্জশিটের হার বেড়েছে। যদিও আলোচিত দুর্নীতিবাজদের সেই অর্থে বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি
অঙ্কের হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের (২০২১ সাল) পুরো সময়জুড়ে অভিযোগের সংখ্যা কমলেও সংস্থাটির দায়ের করা মামলা ও চার্জশিটের হার বেড়েছে। যদিও আলোচিত দুর্নীতিবাজদের সেই অর্থে বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দুদকে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। ২০২০ সালে জমা পড়ে ১৮ হাজার ৪৮৯টি অভিযোগ। বছরের এক মাস (ডিসেম্বর) বাকি থাকলেও বলা যায়, গত বছরের চেয়ে এবার অভিযোগের সংখ্যা কম। তবে, চলতি বছর মামলা ও চার্জশিটের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে।
বিদায়ী বছরে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কতটুকু সক্ষম হয়েছে দুদক— ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে প্রশ্ন রাখা হয় সংস্থাটির চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর কাছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি, এটা জনগণই ভালো বলতে পারবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে কারও কোনো কমতি নেই, সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বছর শেষে প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, এটা মূল্যায়নের ভার জনগণের ওপরই রইল।’
ইকবাল কমিশন থেকে মঈনউদ্দীন কমিশন
চলতি বছরের ১০ মার্চ বিদায় নেন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ও কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। কমিশনার (তদন্ত) হন জহুরুল হক।
২০০৪ সালে গঠিত কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। এরপর যথাক্রমে সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
কমেছে অভিযোগ, বেড়েছে মামলা ও চার্জশিট
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দুদকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮২৮টি। ২০২০ সালে জমা হওয়া মোট অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯টি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অভিযোগ কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দুদকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮২৮টি। ২০২০ সালে জমা হওয়া মোট অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯টি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অভিযোগ কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩২৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুদক। এ সময়ে ২৪৪টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি বা নথিভুক্তি (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি) হয়। অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক সম্পদের নোটিশ জারি করে ১৯৩টি।
অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৩১১টি মামলা দায়ের করতে সক্ষম হয় কমিশন। পাশাপাশি ২২২টি মামলার চার্জশিটও দেয়। গত বছরের তুলনায় মামলা ও চার্জশিট বেড়ে যাওয়ার হার যথাক্রমে ২০ ও ৩৪ শতাংশ। চলতি বছর দুদক এফআরটি (মামলা থেকে অব্যাহতি) দিয়েছে ৮০টি। এর আগের বছরের (২০২০ সাল) জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫২৩টি অভিযোগ অনুসন্ধান এবং ২৫৯টি মামলা করে দুদক। পাশাপাশি ১৬৬টি মামলার চার্জশিট দেয়।
ক্যাসিনো থেকে পি কে হালদার কেলেঙ্কারি
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠার পর এখন পর্যন্ত তিন দফায় ২৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
পি কে হালদার ও তার ২৯ সহযোগীর বিরুদ্ধে ২৩০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সাতটি মামলা দায়ের হয়। ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয় দুদক।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করে দুদক। গত মার্চে মামলাগুলো দায়ের হয়। যার তদন্ত এখনও চলছে।
ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর মধ্যে অন্যতম ছিল পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারি। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে সক্ষম হন পি কে হালদার। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন পি কে হালদার।
পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবন্তীকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এমপি পাপুলকাণ্ড
লক্ষ্মীপুর- ২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে ২০২০ সালের ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজে এমপি হওয়ার পর টাকার জোরে সংরক্ষিত আসনে স্ত্রী সেলিনাকেও সংসদ সদস্য বানান।
কুয়েতের ফৌজদারি আদালত ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন পাপুল। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারান তিনি। সে কারণে সংবিধানের ৬৭ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তার আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
অবৈধভাবে গ্রাহকদের লোন বরাদ্দ দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার এবং শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুয়েতের আদালতে দণ্ড পাওয়া পাপুল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর পাপুল, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
তাদের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর তাদের নামে থাকা ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব আদালতের অনুমতি নিয়ে ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করা হয়। এছাড়া তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা মোট ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট অ্যাটাচমেন্ট করে দুদক।
মামলার পর প্রায় এক বছর পার হলেও চার্জশিট দাখিল কিংবা নতুন কোনো মামলা দায়ের করতে পারেনি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
ক্যাসিনোসহ নানা অবৈধকাণ্ডে অভিযান
ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকের সাঁড়াশি অভিযান হিসেবে যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহবর্তমান জাতীয় সংসদের চার সদস্য, গণপূর্তের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে সংস্থাটির অনুসন্ধান ও তদন্ত এখনও চলমান।
কমিশনের রদবদল ও করোনা মহামারির কারণে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে কিছুটা ভাটা পড়ে। দুই বছর পার হলেও তালিকার প্রায় ৯০ ভাগের বিরুদ্ধে এখনও মামলা বা চার্জশিটের মতো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে অধিকাংশ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। এর মধ্যে এক আদেশে গণপূর্তের অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ শীর্ষ পদে থাকা ১৩ প্রকৌশলীকে অভিযোগে থেকে অব্যাহতি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ১২ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ২৪ আসামির প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করেছে দুদক। তবে তালিকায় থাকা পাঁচ সংসদ সদস্যের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিশন।
ইভ্যালিকাণ্ড
প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। চলতি বছরের ৯ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। কিন্তু অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর দুদক থেকে জানানো হয়, ইভ্যালির অভিযোগ কমিশনের শিডিউলভুক্ত নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটির মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধের বিষয়টি দেখবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আলোচিত দুর্নীতি
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দুস্থদের মাঝে গত জানুয়ারি ও জুনে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এমন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্মিত ঘরের মান নিয়ে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ।
কোথাও নির্মিত ঘর ধস পড়ে, কোথাও বা বালু সরে ভবনে ফাঁটল দেখা দেয়। প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এমনকি গৃহহীনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় ঘর তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পায়।
ওই ঘটনায় এক উপ-সচিবসহ সরকারের পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। যদিও আলোচিত এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদককে তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে, সম্প্রতি পটুয়াখালীর দশমিনায় আশ্রয়ণের একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। প্রকল্পের আওতাধীন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণ না করে সোয়া কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
রাজারবাগের পীরের সম্পদের খোঁজে দুদক
ধর্মের নামে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সাত হাজার একর জমি দখলের অভিযোগ ওঠে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শেষের দিকে পীর দিল্লুর রহমানের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক।
এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৫৬টি ব্যাংক ও ৬৪ জেলা রেজিস্ট্রারসহ ১২২টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। বছরের শেষদিকে রাজারবাগ পীরের ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয় আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। দুদক টিম ইতোমধ্যে রাজারবাগ এলাকা পরিদর্শনও করেছে।
রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার অনুসারীরা সাত হাজার একর জমি ও রাবার বাগান দখলে নিতে অন্তত ৮০০টি ভুয়া মামলা করেন। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা দেওয়ার তথ্যও বের হয়ে আসে। বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত মামলাগুলো স্থগিত করে পীরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন।
চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার দরবারের সব সম্পত্তির হিসাব চেয়ে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আরএম/আরএইচ/এমএআর/