মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ, মামলার অপেক্ষা
বিতর্কিত মন্তব্য ও অডিও রেকর্ড ফাঁসের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, দুই দলের অঙ্গসংগঠন এবং নারী বিষয়ক সংগঠনগুলো। নানামুখী চাপের মধ্যে সোমবার রাতে ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম যান মুরাদ। অবশ্য তার সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি উতরে ওঠার আগেই আরেকটি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে তার জন্য। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ‘হারানো’ ডা. মুরাদ এবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। শিগগিরই তাকে ডাকা হতে পারে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে। আর মামলা হলে সাথে সাথেই ডাক পড়বে তার।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য দিয়েছেন ডিবির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘চরিত্রহনন বা ফোনালাপে অশ্লীলতার বিষয়ে এখনো কেউ মামলা করেনি। মামলা করলে আমরা ডা. মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা ছাড়াই ডিবি কিছু ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। তদন্তের কোনো পর্যায়ে যদি প্রয়োজন মনে করি তাহলে ডা. মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
এ বিষয়ে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেহেতু এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি আমরা কীসের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করব?’
এদিকে সোমবার রাতে ডিবির মুখোমুখি হন চিত্রনায়ক ইমন। তিনি ডিবির সঙ্গে ডা. মুরাদ ও মাহিয়া মাহির ফোনালাপ নিয়ে কথা বলেন।
ডিবির মুখোমুখি হয়ে যা বলেছেন ইমন
ডিবি কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হলেও ইমন ও ডিবি উভয়ের দাবি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়নি। ইমন নিজেই একটি ইভেন্টের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ডিবি অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাম্প্রতিক ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি নিয়ে কথা বলেছেন।
সূত্র জানায়, ইমন ডিবিতে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া তার ফেসবুক বা ফোন হ্যাক হওয়া/না হওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া ইমন ডিবিকে জানিয়েছেন, প্রতিমন্ত্রীর ফোন পেয়ে তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রতিমন্ত্রীকে যেকোনো মূল্যে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। মাহিয়া মাহির সঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী কী কথা বলেছেন সেটা ইমন জানতেন না বলে দাবি করেছেন।
এর আগে নারীদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ৮টার দিকে মুরাদ হাসানকে এ বার্তা পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।
এদিকে মুরাদ হাসানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দল থেকে বহিষ্কার হলে তাকে সংসদ সদস্যের পদও হারাতে হতে পারে।
মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক। তিনি আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মো. মুরাদ হাসান। ২০০৮ সালেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের সময় মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ৫ মাসের মাথায় ওই বছরের ১৯ মে তার দফতর পরিবর্তন করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
এআর/এমএসি/জেএস