বৈধ অস্ত্রের আড়ালে অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা
• অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রি
• মিজোরাম ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান
• অর্ডার ছিল একে-৪৭ এর গুলিরও
• ঢাকার জন্য হতে পারে বড় হুমকির কারণ
• রিমান্ডে নিয়ে আরও তথ্য পেতে চায় পুলিশ
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করা একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। চক্রটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে আসছিল।
গতকাল (রোববার) সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- চট্টগ্রামের বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির একটি পাড়ার হেডম্যান লাল তন পাংখোয়া, হোসেনের দুই সহযোগী মো. আলী আকবর ও মো. আদিলুর রহমান।
বৈধ ডিলার অবৈধ কারবার
আজ (সোমবার) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রামে তার একটি অস্ত্রের দোকান আছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতেন, এখন মারা গেছেন বা অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না, এমন মানুষদের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন হোসেন। ওই লাইসেন্সগুলো দিয়ে অস্ত্র কিনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন তিনি। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, লাল তন পাংখোয়ার বাড়ি রাঙ্গামাটির বরককলের সাইচালে। তিনি পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানানের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি কিনে আকবর ও আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন।
আদিলুর রহমান সুজন মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা দীর্ঘদিন ধরে হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। এরা আবার অবৈধ অস্ত্র চট্টগ্রামের হামিদুল হক,আবদুল মান্নান আহমেদ সফা, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলদের কাছে বিক্রি করতেন।
বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে-৪৭ এর গুলির অর্ডার করেছিল
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক নাম পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন। আমরা রিমান্ডে তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করব। আশা করছি, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এই চক্রের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব।
আমরা আশঙ্কা করছি, তারা ইতোপূর্বে অনেক অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করব। আমাদের আরও আশঙ্কা, তাদের কাছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে-৪৭ এর গুলি অর্ডার করেছিল। কাদের কাছে তারা একে-৪৭ এর গুলি বিক্রি করতে চেয়েছিল, সেগুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে।
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসতে পারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, অবশ্যই এটা হুমকি তো বটেই। অস্ত্রগুলো হয়তো বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত করার জন্য ব্যবহার করা তো। যেটা আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াত।
তারা কতজনের কাছে এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা তাদের কালকে গ্রেফতার করেছি, এ বিষয়ে আমাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। দীর্ঘদিন তারা এই ব্যবসা করে আসছে। আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। আমরা আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাব।
গ্রেফতার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেফতারের সময় অস্ত্রগুলো তাদের ব্যাগের মধ্যে ছিল। তিনজনের কাছে আমরা অস্ত্রগুলো পেয়েছি, আরেকজনের কাছে গুলি পেয়েছি।
এমএসি/এনএফ/জেএস