‘সংকট’ সুরাহায় আজ রেলমন্ত্রী যাচ্ছেন প্রকল্প এলাকায়
দোতলা পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে রেলপথ বসানোর কাজ দ্রুত শুরু করতে না পারলে আগামী বছরের (২০২২ সাল) জুনে একই দিনে সেতুটি দিয়ে সড়ক পরিবহনের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ সম্ভব নয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, মূল পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর অংশটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। তবে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ বলছে, এ অংশে গ্যাস লাইন বসানোসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। এ কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়।
এ অবস্থায় রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আজ (মঙ্গলবার) প্রকল্পের এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি জাজিরাপ্রান্তে রেল সংযোগ প্রকল্পের ভায়াডাক্ট (রাস্তা বা রেলপথের জন্য দীর্ঘ সেতু) উদ্বোধন করবেন। মাওয়া অংশে নির্মিত রেলপথও পরিদর্শন করবেন মন্ত্রী।
• আগস্ট পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৪৩.৫০ শতাংশ
• মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ
• ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৪০.৫০ শতাংশ
• ভাঙ্গা-যশোর অংশের অগ্রগতি ৩২ শতাংশ
পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ তৈরির নির্দিষ্ট অংশে গত আগস্ট মাস থেকে গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর রেলপথের সব স্ল্যাব ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে সবধরনের যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পদ্মার রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সোমবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জানুয়ারি থেকে আমরা পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেলপথ বসানোর কাজ শুরু করতে চাই। এ কারণে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু বিভাগ থেকে আমাদের রেলপথের অংশটুকু বুঝে নিতে হবে। তা না হলে জুনের মধ্যে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলে সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সরকার চায়, আগামী বছরের জুনের মধ্যে সড়কযান ও ট্রেন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দিতে। আদৌও সেটি সম্ভব কি— প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে
‘বিষয়টি দ্রুতই করতে হচ্ছে। সেখানে গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ কোথায়, কীভাবে হচ্ছে; সমস্যা কোথাও আছে কি না— তা সরেজমিন দেখবেন রেলমন্ত্রী। এছাড়া জাজিরাপ্রান্তে রেলপথের ভায়াডাক্টও উদ্বোধন করবেন তিনি। বুড়িগঙ্গা নদীর অদূরে ঢাকা-মাওয়া অংশে রেলপথ নির্মাণের কাজও নিজ চোখে দেখবেন রেলমন্ত্রী।’
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে জানান, পদ্মা সেতুতে রেলপথ বসাতে ছয় মাসের মতো সময়ের প্রয়োজন। এজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সেতু কর্তৃপক্ষকে ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর রেলপথের অংশ হস্তান্তরের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সেতু বিভাগের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে রেলমন্ত্রী সরেজমিন প্রকল্পের এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, মূল পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর অংশটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর করতে হবে। তবে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ বলছে, ওই সময়ের মধ্যে এটি হস্তান্তর সম্ভব নয়
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, যে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে তার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। দরকার হলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের পর্যবেক্ষণও আমরা চাইব। ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর রেলপথের পুরো অংশ না হলেও কিছু অংশ বুঝিয়ে দিলে রেলপথ স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে নিতে পারব।
এদিকে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে জানান, আগামী বছরের মার্চে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পদ্মা সেতুর রেলপথের অংশ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এর আগে নয়।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগের উন্নয়নের জন্য ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে এটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে। মাওয়া থেকে রেলপথ স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ অংশে ৭০০ মিটার রেলপথ স্থাপন হয়েছে।
আগামী বছরের মার্চে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পদ্মা সেতুর রেলপথের অংশ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এর আগে নয়- বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোরের অংশ। সেতু উদ্বোধনের দিন মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালুর অগ্রাধিকার ঠিক করেছে রেলওয়ে। প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)।
প্রকল্পের মূল রেলপথ ১৬৯ কিলোমিটার। এছাড়া রয়েছে লুপ ও সাইডিং রেলপথ ৪৩.২২ কিলোমিটার। রয়েছে তিন কিলোমিটার ডাবল লাইন। সবমিলে ২১৫.২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ হবে। থাকবে প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। ৬৬টি বড় সেতু, ২৪৪টি ছোট সেতু ও কালভার্ট। একটি হাইওয়ে ওভারপাস ও ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে শেষ হয়েছে ৬৯ শতাংশ কাজ, ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৪০.৫০ শতাংশ এবং ভাঙ্গা-যশোর অংশের অগ্রগতি ৩২ শতাংশ।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে চীন। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
পিএসডি/এমএআর/