‘এই ধরনের প্রতিকৃতি দু-একদিনে তৈরি করা যায় না’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা মূল মোটিফ ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’তে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে মোটিফটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। পুলিশ ও চারুকলার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন পরিকল্পিতভাবে আগুনে পোড়ানো হয়েছে মোটিফটি। এই ধরনের প্রতিকৃতি দু-একদিনে তৈরি করা যায় না বলেও জানিয়েছেন চারুকলার একজন শিক্ষার্থী।
আজ (শনিবার) বেলা সাড়ে ১১টায় চারুকলার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়— শামিয়ানা টানানো একটি স্থানে পহেলা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকৃতি তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে ফ্যাসিস্টের যে প্রতিকৃতি রাখা ছিল সেটি আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া শান্তির প্রতীক পায়রাটিও আগুনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বাঘ আকৃতির প্রতিকৃতিটির লেজ কিছুটা পুড়ে গেছে।
চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে কখনো এই ধরনের ঘটনা চারুকলাতে ঘটেনি। তাদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দোসররা জড়িত থাকতে পারে।
অনেকটা একইরকম সন্দেহ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ ফায়েজ তাইয়েব আহমেদেরও। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন— চারুকলায় পরিকল্পিত নাশকতার আগুনে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আমি সন্দেহ করি। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চারুকলায় ফ্যাসিবাদের ডিপ রুটেড অ্যাসোসিয়েশন এখনো থেকে গেছে। এজন্য চারুকলার শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে।
চারুকলার শিক্ষার্থী আবির বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে আমাদের কাজ চলছিল। এমন ঘটনা ঘটতে পারে আমরা এটা চিন্তাই করিনি। টার্গেট করে ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতিটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও তার দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে। এটা তাদেরই কাজ নিঃসন্দেহে।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গত একমাস ধরে এই প্রতিকৃতিটি তৈরি করতে কাজ করে আসছি। আমাদের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। এই ধরনের প্রতিকৃতি ২/১ দিনে তৈরি করা যায় না। এ বিষয়ে এখন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের সন্দেহ পতিত সরকারের দোসররা এই কাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন
চারুকলার শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ভোর ৫টার দিক এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে দুর্বৃত্তরা।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দু-এক মিনিট ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেখান থেকে চলে যান। পুলিশ থাকতে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল— সাংবাদিকরা বারবার এমন প্রশ্ন করলেও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি ডিএমপি কমিশনার।
তার আগে সকালে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এম মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ভোর ৫টার কিছু আগে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত করলে জানতে পারব। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, ফ্যাসিবাদী মোটিফ পোড়াতে গিয়ে শান্তির পায়রা পুড়েছে। যারা মোটিফটি পছন্দ করে না তারাই করেছে, এটা অনুমান করে বলা যায়।
এমএসি/এনএফ