আমানতে সোনাকাণ্ড: ১১৮ গ্রামে যেখানে মামলা সেখানে ৯১০ গ্রামে মুক্ত

বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৯১০ গ্রাম ওজনের সোনা আনা যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘক্ষণ আটক রেখে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অভিযুক্ত যাত্রী মোহাম্মদ মোকসুদ আহমেদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত মোকসুদ আহমেদ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দোভাষী পাড়ার বাসিন্দা আবদুল খালেকের সন্তান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোকসুদ আহমেদ এয়ার আরাবিয়ার ফ্লাইটযোগে সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। গতিবিধি সন্দেহ হলে তার সঙ্গে থাকা লাগেজ তল্লাশি করা হয়। এ সময় হাতঘড়ির চেইন আকারে, মোবাইল এডাপ্টারের ভেতর ও এয়ারপডের ভেতর থেকে লুকিয়ে রাখা বিভিন্ন সাইজের সোনা পাওয়া যায়। নানা উপায়ে আনা প্রায় ৯১০ গ্রাম ওজনের ২৪ ও ২২ ক্যারেটের সোনাগুলো আগুনের তাপে গলিয়ে জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন
বিমানবন্দর কাস্টমসের জব্দ করা তালিকায় উল্লেখ করা হয়— ঘোষণা ছাড়া আনা সোনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২১৫ গ্রাম ওজনের ১৬ পিস ডলফিনের মতো লকেট, ১২৮ গ্রাম ওজনের ৭৮ পিস তারকার মতো লকেট, ৪৬০ গ্রাম ওজনের ৩০ পিস বার, ৮০ গ্রাম ওজনের ৪ পিস চুড়ি, ২০ গ্রাম ওজনের ২ পিস আংটি, ৭ গ্রাম ওজনের চেইন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত যাত্রী মোহাম্মদ মোকসুদ। এ সময় কাস্টমস কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দর কষাকষি করে। একপর্যায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সংস্থার আপত্তির মুখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিযুক্ত যাত্রী মোহাম্মদ মোকসুদের আনা সোনাগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য এক কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৬০ টাকা। এত বড় চালান ধরা পড়ার পরেও তাকে ছেড়ে দেওয়া মানে ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। অথচ এর চেয়ে অনেক কম সোনা আনলেও থানায় নিয়মিত ফৌজদারি মামলা করে আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
বিমানবন্দর কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ব্যাগেজ বিধি অনুযায়ী ঘোষণা দিয়ে একজন যাত্রী শুল্ক ছাড়া সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার বিদেশ থেকে আনতে পারেন। আর সোনার বার সদৃশ হলে সবশেষ বাজেট অনুযায়ী ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম আনা যায়।
সোনা আটক ও অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবারের অভিযান ও সোনা জব্দ করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। সোনা জব্দের পরও কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেটা তারা বলতে পারবেন।
কাস্টমসে হাউসের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় বিদেশে থাকা যাত্রী না বুঝে অল্প পরিমাণ সোনা বেশি আনলে আমরা জব্দ করে অভিযুক্ত যাত্রীকে ছেড়ে দিই। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হই ওই যাত্রীর চোরাচালানের মনমানসিকতা ছিল না। কিন্তু আজ (সোমবার) যাত্রী যে উপায়ে সোনা বিভিন্ন জিনিসপত্রে মধ্যে গলিয়ে এনেছে তাতে বোঝা যায়, তিনি পেশাদার চোরাকারবারি। আর এত বড় চালান এনেও ছাড়া পাওয়ার এরকম নজির কম।
সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (বিমানবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুরূপা দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযানের বিষয়টি আমি শুনেছি। নিয়মানুযায়ী এই পরিমাণ সোনা জব্দের পর যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি একটু ছুটিতে আছি। তারপরও বিস্তারিত জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।
পরবর্তীতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত যাত্রী অবশ্যই চোরাচালানের উদ্দেশ্যে এসব সোনা এনেছেন। আইনানুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রুজু করে থানায় সোপর্দ করার কথা রয়েছে।
তবে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সোমবার বিমানবন্দর থেকে থানায় কোনও আসামিকে হস্তান্তর করা হয়নি।
এমআর/এমজে