এ বছরও সময় মতো ঈদ বোনাস পেলেন না পোশাকশ্রমিকরা

আসন্ন ঈদুল ফিতর ঘিরে দেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য এবারও কোন সুখবর ছিল না। অন্য বছরগুলোর মতোই নির্ধারিত সময়ে তাদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। যার প্রতিক্রিয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ছুটিসংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) সভায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–বোনাসসহ সব পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে মালিকপক্ষকে চলতি মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতনও দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দূরে থাক বরং ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনই এখনও অনেক গার্মেন্ট মালিকরা পরিশোধ করেননি।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
এতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কারখানায় বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হলেও কিছু কারখানায় এখনো তা বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি ১১টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিএমই এর তথ্য অনুযায়ী সমস্যা হতে পারে এমন কারখানার সংখ্যা বলা হয়েছে ২৪৫টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের বেতন ২১০৬টি কারখানায় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ২০৮৩টি কারখানায় পরিশোধ করা হয়েছে। আর ২৪টি কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধের প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া, ১৯০০টি কারখানায় শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ মোট কারখানার ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
অন্যদিকে, ঈদের আগে শ্রমিকদের সুবিধার্থে ১৯৯টি কারখানায় মার্চ মাসের ১৫/৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। তবে কিছু কারখানায় এখনও এই বেতন দেওয়া হয়নি। যা শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে কয়েকটি কারখানার পরিস্থিতি বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
পরিদর্শন রিপোর্টে আরও দেখা গেছে, ২৬ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোট ২১০৭টি কারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। এরমধ্যে ২৬ মার্চে ১৬১টি, ২৭ মার্চে ৩৭৪টি, ২৮ মার্চে ৬৪৮টি এবং ২৯ মার্চে ৯২৪টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে, আজ বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের টাকা ২৭ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ঈদে পোশাক শ্রমিকদের টাকা ২৭ তারিখে মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। পাওনা শোধ না করা পর্যন্ত পোশাক মালিকদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ। এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যারা এই সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগসহ সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কিছু ফ্যাক্টরি মালিক আছেন, নিজে গাড়ি ব্যবহার ও মার্কেট করছেন। আবার ঈদে বিদেশ চলে যান। তারা ঈদে আনন্দ করছেন। অনেকে বিদেশ থেকে ব্যবসা চালাচ্ছেন। অথচ শ্রমিকদের টাকা সময়মতো দিচ্ছেন না।
আরএইচটি/এআইএস