পদ্মা অয়েলের কাছে ‘জিম্মি’ দেশীয় এয়ারলাইন্স

দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জেট ফুয়েল সরবরাহকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ উঠে এসেছে। জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য পারটেক্স পেট্রো, ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো দেশি কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৩ মার্চ) বিইআরসি কর্তৃক জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ শীর্ষক গণশুনানিতে এসব বিষয় উঠে আসে।
বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সংগঠন এওএবির পক্ষে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান ও এয়ার অ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার হাবিবুর রহমান আকন্দ।
বিজ্ঞাপন
নভোএয়ারের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, একটা উড়োজাহাজের মোট অপারেশনাল কস্টের ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ হচ্ছে ফুয়েল কস্ট। আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ফুয়েল কিনতে হচ্ছে। তাতে ওভারঅল কস্ট বাড়ছে, যার কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো ব্যাং করাপ্ট হচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী ফুয়েলের দাম নির্ধারণের দাবি জানাই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে বাড়ে, কিন্তু পরে আর কমে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এখানেও তেলের দাম কমাতে হবে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
বিমানবন্দরে একাধিক তেল সরবরাহকারী রাখার দাবির জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পদ্মার (পদ্মা অয়েল) মনোপলি থেকে মুক্তি চাই। যদিও এটা কমিশনের ব্যাপার নয়। এজন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই আমরা।
তিনি আরো বলেন, পারটেক্স রিফাইনারি এসেছে, যখন আমাদের এখানে ফুয়েলের দাম ১৩১ টাকা, তখন পারটেক্সের এমডি সাহেব আমাদের বলেছেন ৮০ টাকা করে তিনি দিতে পারবেন। কোথায় ১৩১ টাকা আর কোথায় ৮০ টাকা। আমরা যদি এ ধরনের মাল্টিপল অপশন পাই তাহলে আমাদের উচ্চমূল্য দিতে হবে না। আমরা আশা করব যতদিন মাল্টিপল অপারেটর না আসে ততদিন যেন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যৌক্তিক মূল্যে ফুয়েল কিনতে পারি সে বিষয়ে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
মফিজুর রহমান জেট ফুয়েলের একটি মূল্য তালিকা দেখিয়ে বলেন, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবের বিমানবন্দরগুলোর চেয়ে ঢাকায় তেলের দাম বেশি। ঢাকায় এখন কিনতে হচ্ছে প্রতি লিটার ৭৫ সেন্ট হিসেবে। আর অন্য জায়গায় সেটা ৫৫ থেকে ৬৩ সেন্টের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ইউএস বাংলার প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৯৫ সেন্ট, তখন আমাদের এখানে দাম নেওয়া হতো ১১১ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ৭৫ সেন্ট হওয়ার পরেও কিন্তু ১১১ টাকাই নেওয়া হতো। আরেকটা হচ্ছে এখানে আমরা যা কিনছি সবই সরাসরি ইম্পোর্টেড ফুয়েল। আর এখানে পারটেক্স পেট্রো বা আমাদের ইস্টার্ন রিফাইনারির জেট ফুয়েলের হিসাবটা কই।
এ সময় বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ টি এম সেলিম বলেন, (জ্বালানি) শুধু একবারই দিয়েছিল পারেটক্স। এরপর তারা চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেটা কোয়ালিটি মিট করে নাই।
হাবিবুর বলেন, ইন্ডিয়াতে আন্তর্জাতিক বাজারের কাছাকাছি দরে ফুয়েল দিচ্ছে। কারণ তারা নিজেরা ক্রুড (অপরিশোধিত) এনে সেগুলোকে রিফাইন করে জেট ফুয়েল বানিয়ে কম টাকায় বাজারে আনতে পারছে। আমাদের এই রিফাইনারিগুলোকে যদি প্রমোট করা হয় তাহলে তারাও অবশ্যই পারবে।
বিপিসির জিএম এ টি এম সেলিম বলেন, এখন পর্যন্ত বিমানের তেলের দাম বাবদ ১৭০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বিপিসির কাছে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই বকেয়া জমেছে। এখন বিমান নগদ অর্থে তেল কিনছে। আর প্রতি মাসে তারা ১৫-২০ টাকা বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করছে বিমান।
জ্বালানির দাম নির্ধারণ কমিশনের জন্য ‘নতুন শুরু’ উল্লেখ করে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, আমরা আশা করি এটা একটা নতুন শুরু। আমরা বিদ্যুতের দাম অনেক দিন থেকে করতেছি। গ্যাসের দাম ২০০৮ থেকেই হচ্ছে। এখন আমরা তরল জ্বালানির দাম নির্ধারণ শুরু করেছি। ফার্নেস ওয়েল ইজ ইন দ্য লাইন। তিনটা কোম্পানির প্রস্তাব আসলে পরে আমরা ফার্নেস ওয়েল নিয়ে আলোচনা করব।
ওএফএ/এআইএস