পার্ক-জলাধার ধ্বংস করে এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভার না করার দাবি

বৈষম্যমূলক প্রকল্প, পরিবেশ ধ্বংস, নাগরিক অধিকারহরণ, অন্যায্য চুক্তি এবং রাষ্ট্রীয় অপচয়ের কথা উল্লেখ করে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ফ্লাইওভার বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বাংলামটরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) কনফারেন্স আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তারা বলেন, পান্থকুঞ্জ পার্কে এবং হাতিরঝিল জলাধারে নির্মাণকাজ পরিচালনা করার জন্য কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। পুরো প্রকল্পের যে পরিবেশ ছাড়পত্র সেটারও মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। এতদিন ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগের কারণে হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্কের পরিবেশ ইতোমধ্যে ধ্বংসের পাশাপাশি কাঠালবাগান-কাটাবন-নীলক্ষেতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিবহন ব্যবস্থা সীমাহীন সংকটে পড়বে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তারা আরও বলেন, ঢাকাকে বাইপাস না করে বরং ঢাকার একেবারে মধ্য দিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিতে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জংশন বা মোড়ে জালের মতো নতুন নতুন র্যাম্প যুক্ত করে দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আরও যানজট বাড়ানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ প্রকল্প, যা ঢাকাবাসীর ভোগান্তির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জনভোগান্তি, হতাহতের ঘটনা ও দুর্নীতি উদঘাটনে অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। পাশাপাশি এ প্রকল্পের চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে এ প্রকল্পে দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে যোগাযোগ ও পরিবহন অবকাঠামোর ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হয়, তারপর সেটাকে বৈধ করবার জন্য সমীক্ষা বা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ব্যক্তিগত গাড়িতে যেই ৫ শতাংশ লোক চলাচল করেন, তাদের জন্য বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয়; অথচ তার কুফল ভোগ করেন বাকি সাধারণ মানুষ। এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে কম ব্যয়ে ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য পরিবহন ও নগর পরিকল্পনার কর্মকৌশল তৈরি করা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবের সঞ্চালনায় ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুদ্দিন তুহিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পারভীন ইসলাম, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের মুখপাত্র সৈয়দা রত্না, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, প্রাণ প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখপাত্র ইবনুল সৈয়দ রানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, হুমায়রা বিলকিস এবং জাহিন ফারুক আমিন, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের (বারসিক) পরিচালক সৈয়দ আলি বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম এবং জবা তালুকদার, সংগঠক ও শিল্পী অরূপ রাহী, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের মোহাম্মদ মিঠুন প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ