জনস্বার্থ ও বাসযোগ্যতা উপেক্ষা করছে রাজউক : আইপিডি

জনস্বার্থ ও ঢাকার বাসযোগ্যতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাজউক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ড্যাপ সংশোধনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) অনলাইনে আয়োজিত ‘বসবাসযোগ্যতায় তলানিতে থাকা ঢাকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্যে ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সভায় এ বিষয় উল্লেখ করা হয়।
আইপিডি বলছে, ঢাকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের ক্ষেত্রে ঢাকার বাসযোগ্যতা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ প্রাধান্য পাওয়ার কথা। অথচ আবাসন ব্যবসায়ী, ভবন ডিজাইন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের প্ররোচনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জনস্বার্থ ও ঢাকার বাসযোগ্যতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ড্যাপ সংশোধনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শকে একদমই আমলে না নিয়ে স্বেচ্ছাচারীভাবে এ কার্যক্রম চলছে। বিবেচনাহীনভাবে এলাকাভিত্তিক ও প্লটভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) এবং জনঘনত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক, যাতে ইতোমধ্যেই যানজট ও বায়ুদূষণে প্রায় অচল ও মৃতপ্রায় এ শহরের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের অপরিণামদর্শী এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে কোন উদ্দেশ্য ও কার স্বার্থ কাজ করছে, সেটার নির্মোহ তদন্ত করতে হবে সরকারকে। ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে পরিকল্পনাবিদদের কারিগরি পরামর্শ এবং সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করেই ইমারত বিধিমালা ও ড্যাপের যৌক্তিক সংশোধন করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
সভায় আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় আবাসিক ভবনের জন্য মোটা দাগে রাস্তার প্রশস্ততা ও প্লটের আয়তনের উপর ভিত্তি করে সর্বনিম্ন ‘এফএআর’ মান ৩.১৫ ও সর্বোচ্চ ৬.৫ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় আবাসিক এ৩ (ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট) শ্রেণির জন্য এ মান সর্বোচ্চ ৪.২৫ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা মে ২০২৪ সালে খসড়া ইমারত বিধিমালায় অনুসরণ করা হয়েছিল।
অথচ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে রাজউক কর্তৃক প্রণীত ইমারত বিধিমালার খসড়াতে প্লটভিত্তিক আবাসিক এ৩ ক্যাটাগরির ফার মান ৫.৫ করা হয়েছে, যা প্রায় অবাসযোগ্য ঢাকা শহরের ওপর চাপ মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেবে। অথচ বৈশ্বিকভাবেই ছোট আয়তনের প্লটভিত্তিক আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে ফার মান সাধারণত ১ থেকে ৩ এর মধ্যেই হয়ে থাকে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ফার ও জনঘনত্ব দুই থেকে তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রাজউক। অথচ সেসব এলাকার নাগরিক সুবিধাদি একই থাকছে। গোষ্ঠী স্বার্থে বিধিমালার ফার মান পরিবর্তন শহরের জন্য বাসযোগ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ বিবেচনায় নিয়ে ফার মান সাধারণত থাকে ১-৩ এর মধ্যে। অথচ প্রস্তাবিত বিধিমালায় ফার মান সর্বোচ্চ ৬, ৭, এমনকি এনএর বা নিয়ন্ত্রণহীন ফার মান প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ সেন্টারের (এইচবিআরসি) নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাদেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ