ভারতীয় নাবিকদের ছাড়াতে বাংলাদেশিদের আটক করে কোস্টগার্ড
বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় আটক হওয়া ৯৫ ভারতীয়কে ছাড়িয়ে নিতে বাংলাদেশিদের আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে তল্লাশি চালিয়ে দুটি ফিশিং ট্রলারসহ ৭৮ জেলে ও নাবিককে আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। আটকের প্রায় একমাস পর ছাড়া পেয়ে এ অভিযোগ করেন নাবিকেরা।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে কর্ণফুলী চ্যানেলের ১৫ নম্বর ঘাটে নামার পর এ অভিযোগ করেন নাবিকেরা।
মুক্তি পাওয়া এফভি মেঘনা-৫ জাহাজের ক্যাপ্টেন রাজিব চন্দ্র শীল বলেন, ভারতীয় কোস্টগার্ড আমাদের দুটি জাহাজ সার্চ করার জন্য ওঠে। প্রথমে তারা লাইলা-২ তে ওঠে। সেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা তারা সার্চ করে। তারা মনে করেছিল অবৈধ কোনো কাজ হচ্ছিল কি-না। কিন্তু কোনো কিছু পাইনি তারা। পরে আমাদের জাহাজ সার্চ করে। তাদের কী উদ্দেশ্য ছিল সেটা তো আমরা জানি না। এরপর তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।
আমরা বাংলাদেশের জলসীমায় আমাদের মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এরপর তারা রেডিও মারফত জানায় আমাদের এখানে নাকি একটি আইফোন-১৫ প্রো মডেলের মোবাইল ফেলে গেছে। এটা আবার সার্চ করতে আমাদের যেতে দেবে। এরপর সেখানে গেলে তারা আমাদের আটক করে।
তিনি আরও বলেন, আটক করার পর আমাদের জানায় তাদের কিছু জেলে ও ফিশিং বোট বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। তাদের ফেরত দিলে আমাদের ছেড়ে দেব বলে তারা জানায়। প্রথম থেকেই তারা এটা বলে আসছিল।
এফভি লাইলা-২ জাহাজের সেকেন্ড অফিসার সাজেদুল ইসলাম জানান, তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই আমাদের ধরে নিয়ে যায়। ধরার পরপরই তারা আমাদের বলেছে, তাদের কিছু লোক আমাদের দেশে আটক আছে। তাদের ছাড়ানোর কোনো দিক পাচ্ছিল না। তাই ফাঁদে ফেলে আমাদের আটক করে তাদের ছাড়িয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোস্ট গার্ডের পূর্বজোনের জোনাল কমান্ডার জহিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ ছিল তারা ভারতীয় সীমানায় মাছ ধরছিল। সেজন্য তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা এসেছে। এ বিষয়ে পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। ভারতীয় কোস্টগার্ড বলেছে জেলেরা তাদের সীমানায় চলে গেছে সেটি সঠিক নাকি তারা আমাদের সীমানায় চলে এসেছে সেটা। আমরা বিষয়টি যাচাই করছি।
বাংলাদেশে আটক ভারতীয় জেলেদের মুক্ত করতেই এ ঘটনা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের এখানেও তাদের কিছু জেলে আটক ছিল, আবার তাদের ওখানে আমাদেরও ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে এ বিনিময় হয়েছে।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর দুপুরে বাংলাদেশের সমুদ্রে মাছ ধরার সময় দুটি ট্রলারসহ ৭৮ জন জেলে-নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। ঘটনার পরদিন খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকার অদূরে সমুদ্র থেকে ট্রলারসহ তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মালিকপক্ষ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছিল। আটক দুটি নৌযান হলো ‘এফভি লায়লা-২’ ও ‘এফভি মেঘনা-৫’। এফভি লায়লা-২ ট্রলারটি এস আর ফিশিং নামের প্রতিষ্ঠানের। আর এফভি মেঘনা-৫ ট্রলারটি সিঅ্যান্ডএফ অ্যাগ্রো লিমিটেডের মালিকানাধীন।
ভারতীয় জলসীমায় মাছ শিকারের অভিযোগ এনে ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের আটক করে। পরে তাদের উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আদালতের মাধ্যমে অনুপ্রবেশের দায়ে কারাগারে রাখা হয়। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি মাছ ধরার নৌকা ‘এফভি কৌশিক’ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ডুবে যায়। ওই নৌকায় থাকা ১২ বাংলাদেশি জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাদেরও অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে পশ্চিমাঞ্চলীয় আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভারতে আটক থাকা ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে/নৌকর্মী এবং বাংলাদেশে আটক ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে পারস্পরিক হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
এর আগে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে ভারতীয় ৬টি ট্রলার ও ৯৫ জন জেলেকে আটক করে বাংলাদেশি কোস্টগার্ড।
আরএমএন/এমএন