সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে
সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন তারা। একইসঙ্গে গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের (এফবিএস) আয়োজনে ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জাতীয় সংলাপে কথা বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।
সকালে জাতীয় সংলাপের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেওয়া হয়নি। দুটি মসজিদে মরদেহের গোসল করাতে দেওয়া হয়নি। এত রক্ত শুধু একটা নির্বাচনের জন্য দিইনি।
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন। এটাকে জাতির জন্য ব্যর্থতা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের জন্য অপমানজনক বলে দাবি করেন আবু বকর।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কি না– এমন প্রশ্ন তোলেন নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি হত্যাকাণ্ডে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে এক হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হতো। দুজন করে জড়িত থাকলে দুই হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হতো। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩ জন পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে? তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে বিচার হবে? আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের (নাম বলেননি) ভাগনে এডিসি জড়িত। তাকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও হয়নি।
নিহত পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা। গোলাম রহমান তার ছেলের নামে একটি রাস্তা ও মেট্রোরেলের স্টেশন নামকরণের দাবি জানান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে। এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা কী হবে, সেই ঐক্য দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের পথে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ আপনি যত ভালো সংবিধান তৈরি করেন না কেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে সেই সংবিধান আবারও ভাঙা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জোর দিতে হবে।
বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। এ দেশে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে কিন্তু রাজনীতিতে সেভাবে এগোতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নেই। তারা যদি ভবিষ্যতে নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়ত মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক হুসাইন খান বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে শুধু আইনকানুন পরিবর্তন করলে হবে না। বাংলাদেশে একটি গোপন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ গোপন ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। কারণ আইন করা সহজ। কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোর ভাঙা না হলে ওই আইন আবারও ভাঙা হবে। কাজটা এখনই করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ক্ষমতার গোপন কাঠামো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে।
মুশতাক হুসাইন খুনিদের বিচারের পাশাপাশি বড় বড় চোরের বিচার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সবাইকে একসঙ্গে (ধরতে) পারা যাবে না। একজন, দুজনকে ধরতে হবে। মানুষ তখন দেখতে পারবে যে চুরি করে পার পাওয়া যাচ্ছে না।
এমএসআই/এসএসএইচ