বিজয় দিবসে ঢাকার উঁচু ভবনগুলোতে উড়বে বড় আকারের লাল-সবুজ পতাকা
প্রতি বছরের মতো এবারও ১৬ ডিসেম্বর দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হবে মহান বিজয় দিবস। দিনটিতে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে উড়বে বাংলাদেশের বড় আকারের লাল-সবুজ পতাকা। সেইসঙ্গে দেশের সব জেলা এবং উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হবে।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী। সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভার কার্যবিবরণীতে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলা হয়, সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে বাংলাদেশের বড় আকারের পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন/সোহরাওয়ার্দী উদ্যান/মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, সকল জেলা প্রশাসক, সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ভবনগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ভবনের মালিক এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেল জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করবে।
প্রচলিত পরিমাপ অনুযায়ী জাতীয় পতাকা তৈরি করে তা উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন
অন্য যেসব সিদ্ধান্ত হয়
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সাভারগামী দুটি রাস্তার (ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-আশুলিয়া-সাভার) প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। দেশের সব জেলা এবং উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলা (চারু, ফারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হবে।
অন্যদিকে, শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সমন্বয়ের মাধ্যমে এককভাবে বা যৌথভাবে এবং চাঁদপুরে ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো এককভাবে দুপুর ২টা থেকে ওইদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং দেশের সর্বত্র মিলনায়তনে বা উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, ডে কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ এবং বিভিন্ন স্থাপনায় জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙিন নিশানের মাধ্যমে সজ্জিত করা হবে। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা এবং বিনা টিকিটে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘরগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৫ কমিটি-উপকমিটি
কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দুটি কমিটি এবং তিনটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটি হলো– ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে স্টিয়ারিং কমিটি’ ও ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সশস্ত্র অভিবাদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ কমিটি।’
তিন উপকমিটি হলো– ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বাণী প্রস্তুতকরণ, পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠান, বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ সংক্রান্ত উপকমিটি’, ‘জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরাপত্তা, ট্রাফিক ও পুলিশ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত উপকমিটি’ এবং ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আমন্ত্রণপত্র প্রস্তুত ও বিতরণ উপকমিটি।’
সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধে সীমাহীন ত্যাগ এবং অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করে মহান বিজয় অর্জন করে। বাঙালি জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ যদিও ২৬ মার্চ শুরু হয়েছে, তবে পরিপূর্ণভাবে আমরা হানাদার মুক্ত হয়েছি ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। এই মহান বিজয় দিবস প্রতি বছরই জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রোগ্রাম সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ২০২৪ আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য এ সভার মাধ্যমে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।
ঢাকার দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে বাংলাদেশের বড় আকারের পতাকা উত্তোলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। এখনো অনেক সময় আছে। এর মধ্যেই ব্যবস্থা নেব।
এসএইচআর/এসএসএইচ