হয়রানির জন্য নিরীহদের তালিকা করা অফিসারদের চিহ্নিত করুন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে এসবি। তবে একজন জুনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এ সম্পাদক। যারা সাংবাদিক আটকানোর তালিকা তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা জানতে চেয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে ইংরেজিতে একটি পোস্ট করেন নুরুল কবির।
সেখানে বলা হয়, ঢাকা বিমানবন্দরে আমাকে যে হয়রানি করা হয়েছিল তার দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে কোনো সাংবাদিককে এ ধরনের হয়রানির শিকার হতে হবে না বলে ঘোষণা দেওয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার হয়রানির জন্য বিমানবন্দরে জুনিয়র পোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ অফিসারকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে আমি হতাশ। জুনিয়র অফিসার নয়, বরং বিমানবন্দরে যাত্রীদের আটকানোর তালিকা তৈরি করেছিলেন তাদের শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রত্যাহার হওয়া জুনিয়র কর্মকর্তার আচরণ খুবই ভালো ছিল। বরং তিনি আমার ক্লিয়ারেন্সের জন্য তার বসের কাছে ফোন করেছিলেন। সিনিয়রদের কারণে একজন জুনিয়র অফিসারকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য। সরকারের স্বৈরশাসনের পতনের পরও যারা বিভিন্ন তালিকা তৈরি করে বিমানবন্দরের নিরীহ যাত্রীদের হয়রানি করছে, সরকারের উচিত তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বারবার হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির শনিবার (২৩ নভেম্বর) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাস দেন।
আরও পড়ুন
স্ট্যাটাসে নুরুল কবীর বলেন, ‘দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে যাওয়ার সময় ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আমাকে হয়রানি করে আসছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আমার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, মুদ্রিত নথিতে সবকিছু লেখা থাকা সত্ত্বেও ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষা করানো, আমার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে পাসপোর্টের পৃষ্ঠার ছবি তোলা ও উড়োজাহাজ উড্ডয়নের কয়েক মিনিট আগে নথিপত্র ফেরত দেওয়ার মতো হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যদিও দেশে ফেরার সময় কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এবার ১৮ নভেম্বর একটি মিডিয়া কনফারেন্সের জন্য বিদেশে যাচ্ছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যে ঢাকা বিমানবন্দরে আমার হয়রানির দিনগুলো অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও শেষ হয়েছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। এবার বরং দ্বিগুণ হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। দেশ ছাড়ার সময় এক ঘণ্টা এবং ২২ নভেম্বর দেশে ফেরার সময় আরও এক ঘণ্টা হেনস্তার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশপ্রেমিক হওয়াটাকে সন্দেহের চোখে দেখে।’
পরে বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বার্তায় জানানো হয়, এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে কোনো সাংবাদিক হয়রানির ঘটনা বরদাশত করবে না।
এ ঘটনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এসবি ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে ও অভিযুক্ত ইমিগ্রেশন কাউন্টারের কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা জানায়, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের ‘ব্লকড লিস্ট’ এর কারণে এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে। এ তালিকায় কয়েক হাজার লোককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে করে তাদের বিদেশ সফরের সময় আটকে দেওয়া যায় বা বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত রাখা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পুলিশের বিশেষ শাখা আগের তালিকা থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের বাদ দিতে শুরু করেছে। কাজটির বেশিরভাগই হাতে-কলমে করা হচ্ছে। ফলে কিছু ভিন্নমতাবলম্বী ও সাংবাদিকের নাম এখনো রয়ে গেছে। তালিকাটি দ্রুত যাচাই করে সংশোধন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট সম্পাদক নুরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় আবারও দুঃখ প্রকাশ করে এসবি জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের বন্ধু। দেশ ও জনগণের সেবায় পুলিশ বাহিনী দৃষ্টান্ত গড়তে চায়।
এআর/এসএসএইচ