সার্ভার জটিলতা, বিরক্ত ডেসকো-ডিপিডিসির গ্রাহকেরা
প্রিপেইড মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে ভোগান্তির নতুন এক নাম সার্ভার জটিলতা। এজেন্টভিত্তিক বিদ্যুৎ বিল রিচার্জ করার ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার করা হয় পিওএস মেশিন বা পজ মেশিন। এতে করে লাইনে অপেক্ষা ছাড়াই অল্প সময়ের মধ্যে করা যায় মিটার রিচার্জ। কিন্তু বিভিন্ন সময় ব্যাংক ও ডেসকোর (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) সার্ভারে ধীরগতির (স্লো) কারণে পাঁচ মিনিটের কাজ গড়ায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিটে। এজেন্ট ছাড়া বিদ্যুৎ অফিসে সশরীরে বিল জমা দিতে গেলেও পড়তে হয় একই ভোগান্তিতে।
সরেজমিনে ডেসকো অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গী এলাকায় বসবাসকারী গ্রাহক আমিনুর রহমান বিল পরিশোধ করতে এসেছেন। সকাল-সকাল গেলেও সার্ভার স্লো থাকায় আধাঘণ্টা পর বিল জমা দিতে সক্ষম হন তিনি।
আমিনুর রহমান বলেন, বিল দেওয়ার জন্য সকাল-সকাল এসেছিলাম, তেমন ভিড় ছিল না। কিন্তু সার্ভার স্লো থাকায় আধাঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করার পর বিল দিতে পেরেছি। ভিড় বেশি থাকলে হয়ত আরও সময় লাগত।
আরও পড়ুন
‘প্রায় সময়ই বিল দিতে এলে দেখা যায় যে সার্ভার স্লো থাকে। ফলে পাঁচ মিনিটের কাজ করতে আধাঘণ্টা, কখনও কখনও এক ঘণ্টাও লেগে যায়। সবকিছু অনেক আধুনিক হয়েছে, সংশ্লিষ্টদেরও উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিও বিল দিতে আসেন, তাদের ক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটা কষ্টকর।
ব্যাংকের সার্ভার স্লো থাকার বিষয়টি নতুন নয়
ডেসকোর টঙ্গী অফিসে কর্মরত এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার সাধারণত কার্যদিবস শুরু হওয়ায় সার্ভারে চাপ থাকে। এ দিন সার্ভার কিছুটা স্লো হয়ে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার কারণেও সার্ভার স্লো হয়ে যায়। তবে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
ব্যাংকের পাশাপাশি ডেসকোর সার্ভারেও দেখা যায় জটিলতা। মোবাইল ব্যাংকিং বা এজেন্টের মাধ্যমে বিল প্রদান শেষেও ডেসকোর সার্ভারে সমস্যা থাকার কারণে মিটারে তা রিচার্জ হয় না, ফলে বাধ্য হয়ে আসতে হয় নিকটস্থ অফিসে।
রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় বসবাসকারী আরিফ জামান বলেন, রকেটের মাধ্যমে এক হাজার টাকা রিচার্জ করেছি। টাকা কেটে নিয়েছে, কিন্তু মিটার লোড হয়নি। পরে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তা ঠিক করতে হয়েছে।
আরেক গ্রাহক নূরজাহান বেগম জানান, মিটারের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দোকানে রিচার্জ করতে আসি। কিন্তু রিচার্জ হতে সময় লেগেছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। অনেক সময় কাজের তাড়া থাকে। সে সময় এ রকম অপেক্ষা কেবল ভোগান্তি বাড়ায়।
সার্ভারের দুর্বলতা নিয়ে ভোগান্তির কথা জানালেন ডেসকোর এজেন্টরাও। উত্তরা আবদুল্লাহপুর এলাকার প্রিপেইড এজেন্ট শাহরিয়ার নাদিম বলেন, ডেসকোর সার্ভার মাঝেমধ্যে এত স্লো থাকে যে পেমেন্ট প্রক্রিয়া শেষ করতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লেগে যায়। অথচ স্বাভাবিকভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে পাঁচ মিনিটের মতো। তাদের উচিত দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা।
ডেসকোর মতো ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) ক্ষেত্রেও সার্ভারের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এজেন্টভিত্তিক পজ মেশিনের মাধ্যমে রিচার্জ করতে গেলে অনেক সময় রিচার্জ সফল হয় না কিংবা অতিরিক্ত সময় লাগে।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকার গ্রাহক সোহেল মাহমুদ বলেন, আমার বাসায় তিনটা মিটার রয়েছে। মাসে দুই থেকে তিনবার করে তা রিচার্জ করতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় রিচার্জ করতে গিয়ে সার্ভারের সমস্যায় পড়তে হয়। কখনও নেট স্লো থাকে, কখনও-বা কারিগরি সমস্যা।
সিম কোম্পানির নেটওয়ার্ক সমস্যাকে দায়ী করছে দুই কোম্পানি
ডেসকো ও ডিপিডিসির কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সার্ভার জটিলতার মূল কারণ সিম কোম্পানির নেটওয়ার্ক সমস্যা। বিভিন্ন সময় তাদের নেটওয়ার্ক স্লো থাকে। ফলে রিচার্জের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লাগে।
এ প্রসঙ্গে ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) জাকির হোসেন বলেন, সার্ভার নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। তবে, অধিকাংশ সময় এ সমস্যা হয় নেটওয়ার্ক ইস্যুর কারণে। সিম কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক স্লো থাকে, তাই সঠিক সময়ে রিচার্জ সম্পন্ন করা যায় না। আমরা এ নিয়ে সিম কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি।
‘আমাদের সার্ভারেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তবে, সবকিছু নিয়েই আমরা কাজ করছি। দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন
ডিপিডিসির জেনারেল ম্যানেজার (এনার্জি ও মিটারিং) মো. রবিউল হাসান বলেন, ডিপিডিসির সার্ভারে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে পজ মেশিনের মাধ্যমে রিচার্জের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটা হয় সেটা নেটওয়ার্ক ইস্যুর কারণেই হয়। ডিপিডিসির নিজস্ব সার্ভারের কারণে এ ধরনের সমস্যা খুব কম হয়েছে। কোনো গ্রাহক অভিযোগ নিয়ে এলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করে দেওয়া হচ্ছে।
ওএফএ/এমজে/এমএআর/