আগে বিল আসত ৪ হাজার, এ মাসে ৪২ হাজার!
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা হাজেরা বেগম। নিজ বাড়িতে ব্যবহার করেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) প্রিপেইড মিটার। গড়পড়তা প্রতি মাসে তার বিদ্যুৎ বিল আসত চার হাজার টাকার মতো। কিন্তু চলতি মাসে বিল এসেছে ৪২ হাজার টাকা। বিশাল অঙ্কের এ বিল দেখে অবাক তিনি।
বিল প্রসঙ্গে অভিযোগ জানাতে ডিপিডিসির আসাদগেট অফিসে যান হাজেরা বেগম। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
হাজেরা বেগম বলেন, ‘বাসায় মিটার বসানোর আগে পাশের বাসার একটি মিটার থেকে সাবলাইন নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতাম। মিটার পাওয়ার পর প্রতি মাসে ব্যবহার বুঝে গড়ে দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা বিল আসত। কিন্তু এবার বিল এসেছে ৪২ হাজার টাকা, যা অবিশ্বাস্য। এত টাকা বিল আসার মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু কীভাবে এলো, তা জানি না।’
অভিযোগ দেওয়ার পর ডিপিডিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এত টাকা বিল আসার মতো বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়নি। মিটারের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তার বাড়িতে বিদ্যুতের কর্মী পাঠানো হবে।
প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের এ ভোগান্তি নতুন নয়। বাড়তি বিলের এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ অফিসগুলোতে ছুটছেন গ্রাহকেরা।
আরও পড়ুন
টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় বসবাস করেন শাহীনূর রহমান। তিন রুমের একটা ফ্ল্যাটবাসায় প্রতি মাসে তার গড়ে বিদ্যুৎ বিল আসত এক হাজার টাকার কিছু কম-বেশি। কিন্তু চলতি মাসে তার বিল এসেছে দ্বিগুণের মতো।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) গ্রাহক শাহীনূর বলেন, প্রতি মাসে আমার গড়ে বিদ্যুৎ বিল আসত এক হাজার টাকার মতো। সর্বোচ্চ এক-দুইশ টাকা বেশি আসত। কিন্তু এ মাসে বিল এসেছে দুই হাজার ১০০ টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি মাসে আমার একটা খরচের হিসাব থাকে। সেখানে যদি এমন হুটহাট বেশি বিল আসে, সেটা চরম এক বিরক্তিকর ব্যাপার। এর সঙ্গে যোগ হয় ভোগান্তি।
একই এলাকার আরেক গ্রাহক শামসুল হক তার বাড়িতে সাতটি প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন। প্রতি মাসে সবগুলো মিটার মিলিয়ে তাকে চার হাজার টাকা রিচার্জ করতে হতো। কিন্তু চলতি মাসে তাকে প্রায় আট হাজার টাকা লোড করতে হয়েছে। যে মিটারে ৫০০ টাকা লোড করলে পুরো মাস যেত, সেখানে চলেছে ১৪ বা ১৫ দিন। ফলে আবারও তাকে ৫০০ টাকা রিচার্জ করতে হয়েছে। আবার আগে যেখানে হাজার টাকার রিচার্জে মাস চলত, এখন সেখানে দুই হাজার টাকা রিচার্জ করতে হয়েছে।
শামসুল হক বলেন, ‘নিজ বাসার পাশে আমি নয়টা রুম ভাড়া দিয়ে থাকি। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে চার হাজার টাকার মতো লোড করতে হতো। কিন্তু এবার মাসের অর্ধেকে এসে তা শেষ হয়ে গেছে। ফলে আবার লোড করতে হয়েছে। এ মাসে কেন এমন বাড়তি খরচ হলো, তা বুঝলাম না।’
অভিযোগ জানানোর পর কী হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা জানাল, স্লাব ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে বিল বেশি এসেছে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি মিটার নিলে স্লাব ব্যবহারের চাপ কমে আসবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আসে। এ ক্ষেত্রে যেমন গ্রাহকের ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, পাশাপাশি কারিগরি ত্রুটিও থাকে।
ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রিপেইড মিটারে বাড়তি বিলের সমস্যার ক্ষেত্রে আদালতে ইতোমধ্যে রিট হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কাজ করছি। অ্যাকুরেসি (নির্ভুলতা) চেক করার জন্য আমরা বেশ কয়েকটি মিটার নিয়ে কাজ করেছি। যেসব গ্রাহকের প্রিপেইড মিটারে বিল বেশি এসেছে, তাদের মিটারের সঙ্গে আমরা একটা পোস্টপেইড মিটার স্থাপন করেছি। এটি দেখার জন্য যে দুটো মিটারের রিডিংয়ে পার্থক্য আছে কি না। দেখা গেল পার্থক্যের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম, অর্থাৎ মিটার ঠিক আছে।
তিনি বলেন, বেশি বিলটা আসে লোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে। একজন পোস্টপেইড মিটার ব্যবহারকারীর চাহিদা দুই কিলোওয়াট, কিন্তু তিনি চাইলেন সাত থেকে আট কিলোওয়াট, সে ক্ষেত্রে বিলটা বেশি আসে। অন্যদিকে, প্রিপেইড মিটারের যতটুকু লোড বরাদ্দ দেওয়া থাকে, তার চাইতে বেশি ব্যবহার করলে মিটার ট্রিপ করে বিল বেশি আসে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে ডেসকো অফিসে গিয়ে লোড বাড়াতে হয়।
‘লোড বাড়ানোর পর স্বাভাবিকভাবেই চার্জ বেড়ে যায়। ফলে দুই কিলোওয়াটে যে ডিমান্ড চার্জ রাখা হয়, সেটি বেড়ে যায়। এ কারণে গ্রাহক যখন এক হাজার টাকা লোড করেন, সেখান থেকে হয়ত চার্জবাবদ ৩০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।’
‘অনেকে পাঁচ মাসের জন্য একবারে ১০ হাজার টাকা লোড করেন। এ সময়ে তার কোনো চার্জ কাটা হয় না। কিন্তু টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন আবার রিচার্জ করেন, তখন ওই পাঁচ মাসের খরচ একবারে কেটে নেওয়া হয়। দেখা গেল দুই হাজার টাকা রিচার্জ করলেন, তার পুরোটাই কেটে নেওয়া হলো।’
জাকির হোসেন বলেন, অনেক সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে হয়ত অতিরিক্ত বিল আসে। তবে, সে ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে তা যথাযথভাবে সমাধান করা হয়।
ওএফএ/এমজে/এমএআর/