আগে ১০ বিয়ের দাওয়াত পেতাম, এবার একটাও না
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলছে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধে অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজনেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে ঘরোয়াভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। অনুষ্ঠানে নিষেধ থাকায় বিয়ে কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিকাহ রেজিস্ট্রাররা (কাজী)।
তারা বলছেন, অন্য সময় রমজানে বিয়ে পড়ানোর জন্য যে পরিমাণ দাওয়াত পেতেন, এবার সেটা অনেক কমে গেছে। কারণ হিসেবে তাদের দাবি, অনেকেই অনুষ্ঠান করে বিয়ের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তাতে এখন নিষেধাজ্ঞা আছে। সেজন্য বিয়েও অনেক কম হচ্ছে। তবে বিধিনিষেধ উঠে গেলে বিয়ের ‘ধুম’ লাগবে বলেও জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মো. সফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান মাসে ছয় থেকে সাতটি বিয়ে পড়াই। কিন্তু এবার মাত্র একটি পড়িয়েছি।
দেশে বছরে গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ বিয়ে হয়ে থাকে। সে হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে বিয়ে হয় ৪৫ থেকে ৪৬ হাজার। রমজান মাসে বিয়ে কম হয়। তবে হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের সংখ্যা এ মাসেও স্বাভাবিক থাকে
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ২০ রমজানের পর অন্তত ১০টি বিয়ে পড়ানোর দাওয়াত পেতাম। এবার একটিও পাইনি। যেটা পেয়েছি সেটা ২০ রমজানের আগে। বিধিনিষেধের কারণে অনেকে এখন বিয়ে করছেন না। বিধিনিষেধ উঠে গেলে বিয়ের সংখ্যা বাড়বে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত রমজানে আমি ১০ থেকে ২০টি বিয়ে পড়াই। কিন্তু এবার মাত্র তিনটি পড়িয়েছি।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু বকর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিধিনিষেধে অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। সেজন্য অনেকেই বিয়ে করছেন না। ঈদের পর বিধিনিষেধ উঠে গেলে হয়তো আবার বিয়ের ‘ধুম’ পড়বে।
নিবন্ধন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে বিয়ে হয় ৪৫ থেকে ৪৬ হাজার। রমজান মাসে বিয়ে কম হয়। তবে হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের সংখ্যা এ মাসেও স্বাভাবিক থাকে।
হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার অঞ্জনা রানী ভৌমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন অনেক কিছুই বন্ধ। সে কারণে বিয়ে হচ্ছে না বললে চলে। আবার দেখা যায় অনেকেই অনুষ্ঠান করে বিয়ে করতে চান, তারা তো এখন করতে পারছেন না।
এদিকে, করোনার মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল মৌলভীবাজার সদরের একটি সেন্টারে বিয়ে বন্ধের পাশাপাশি আয়োজন করায় কনেপক্ষ ও কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেছার উদ্দিন।
জানা গেছে, বিয়ের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই কমিউনিটি সেন্টারে অভিযান চালায়। এ সময় কনেপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা এবং জমায়েত নিষিদ্ধ জেনেও বিয়েতে সহযোগিতা করায় সেন্টার কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে সেন্টারটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নিবন্ধন অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নৃপেন্দ্র নাথ সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরোয়াভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে অনুষ্ঠান না করার বিষয়ে সরকারের যে নির্দেশনা আছে, তা সবাইকে মানতে হবে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘরোয়াভাবে বিয়ের ব্যাপারে আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞা দেইনি।
গত ৫ মে বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে একটি নির্দেশনায় বলা হয়, জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। সে অনুযায়ী ঈদের দুই দিন পর অর্থাৎ ১৬ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠান করে বিয়ে করা যাবে না। যদিও বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৩ মে পর্যন্ত করা হচ্ছে। সেহেতু এ সময় পর্যন্ত আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠানের ওপরও বিধিনিষেধ বলবৎ থাকছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিয়েতে অনুষ্ঠান হলে করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা থাকে। সেজন্য আয়োজন করে বিয়ে ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘরোয়াভাবে বিয়ের আয়োজনে নিষেধ নেই। অনেকে কিন্তু এ বিধিনিষেধেও ঘরোয়াভাবে বিয়ে করছেন। ঈদের পর করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, সেটি তুলে নেওয়া হবে।
এসএইচআর/এসএসএইচ/এমএআর/