ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসির কার্যক্রমে যুক্ত হলেন ৪২০ স্বেচ্ছাসেবী
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন ৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবী। এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ৩০০ জন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং বাকি ১২০ জন কমিউনিটি ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবী) এবং আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্পের স্বাস্থ্যকর্মী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরী ও ডেঙ্গু রোগী খুঁজে বের করতে বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডিএনসিসি। সেই কার্যক্রমেই যুক্ত হলেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে ডিএনসিসি'র ইপিআই এর সাথে সংযুক্ত ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী তাদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ০২, ০৩, ০৪ ও ০৫ এর অন্তর্গত ১৩টি ওয়ার্ডে ঘনবসতিপূর্ণ মোট ১৮ টি বস্তি (কড়াইল বস্তি সাততলা বস্তি, বাউনিয়াবাধ, কল্যাণপুর পোড়া বস্তি, রহমত ক্যাম্প, আগারগাঁও বিএনপি বস্তি, চলন্তিকা বস্তি, মেথরপট্টি, মিরপুর সিরামিকস বস্তি ইত্যাদি) এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বস্তিতে বসবাসকারীদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছেন। তারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্যও সংগ্রহ করছে তারা।
ডিএনসিসি'র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, “ইপিআই এর সাথে সংযুক্ত ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবী ডিএনসিসি এলাকার ডিএনসিসির অন্তর্গত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ইপিআই কর্মসূচি থেকে বাদ পড়া শিশুর সন্ধানকার্য পরিচালনা করছেন। এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাওয়ায় নিয়মিত এই কাজের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, জ্বরের রোগীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছেন।”
তিনি আরও বলেন, প্রতিজন কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবী তার নির্ধারিত এলাকার ২০০ টি খানা, বাড়ি পরিদর্শন করছেন এবং প্রতিদিন মোট ৬০০০০টি বাড়ী, পরিবারকে পরিদর্শন করা হচ্ছে। ৩৩ জন সুপারভাইজার স্বেচ্ছাসেবীদের এই কার্যক্রম তদারকি করছে। এছাড়াও আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতাধীন ১২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী তার নিজ নিজ এলাকায় বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টি এবং ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান করছে। স্বেচ্ছাসেবীদের এই কার্যক্রম ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও ডিএনসিসির প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসমূহে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বনানীর হোটেল সারিনায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ৬০ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্সদের ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওযায় ডেঙ্গু রোগীকে ক্লিনিক্যালি শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও পরামর্শ, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম সনাক্ত ও রেফারাল সিস্টেম এর উপর এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। শহীদ সোহরওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল আহসান ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ শিমুল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দুই দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
প্রশিক্ষণের সময় ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, বিপদজনক চিহ্ন সনাক্তকরণ, বাড়ীতে রেখে রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম, রোগীর তদারকি, রিপোর্টিং সম্পর্কে ধারনা প্রদান করেন প্রশিক্ষকরা। এছাড়া গর্ভবতী মা, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা রয়েছে তাদের দ্রুত ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তকরণ সম্পর্কে ধারণা দেন তারা।
প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ফলে চিকিৎসকগণ ডিএনসিসি এলাকায় বসবাসরত জনসাধারন বিশেষ করে মা ও শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর সনাক্তকরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং জটিলতা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে রেফারাল সেবা সঠিকভাবে প্রদান করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হবেন।
এএসএস/এসএমডব্লিউ