শেহবাজের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস, মোদির সঙ্গে অনিশ্চিত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। নিউইয়র্কে অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তিনি। তবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক অনিশ্চিত।
এ ছাড়া, আয়োজক দেশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। সেখানে বাইডেনের সঙ্গে ইউনূসের দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকার একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। একটি সূত্র জানায়, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন ড. ইউনূস। ওইদিন সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পর প্রথম বিদেশ সফরে তিনি নিউইয়র্কে যাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে প্রস্তুতি চলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তার নিউইয়র্কের কর্মপন্থা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ প্রায় নিশ্চিত। সফরে বিভিন্ন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হবে শেষ মুহূর্তে।
অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক যে হচ্ছে, সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া, ড. ইউনূসের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হংবোসহ জাতিসংঘের আরও অনেক সংস্থার প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
মোদির সঙ্গে বৈঠক চেয়েছে ঢাকা
আগামী শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্ক যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিউইয়র্কে অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠকের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বৈঠক হবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, নিউইয়র্কে অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চেয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। শুধু তা-ই নয়, নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক না হওয়ার বার্তাও দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। তবে, ঢাকা ও ভারতের সংশ্লিষ্টরা এখনও বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।
মোদির সঙ্গে বৈঠক চাওয়া নিয়ে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে বৈঠক চাওয়া নিয়ে যখন সংবাদ করেছে তখনও আমরা জানতাম না নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্কে যাবেন কি না। উনি যাবেন কি যাবেন না, সেটি নিশ্চিত না হয়ে তো বৈঠক চাওয়া যায় না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন, তা এখন নিশ্চিত। ইতোমধ্যে ঢাকার পক্ষ থেকে বৈঠক চাওয়ার প্রশ্নে কৌশলী জবাবে এ কূটনীতিক বলেন, বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় গুরত্বপূর্ণ বৈঠক শেষ মুহূর্তে এসে ঠিক হয়।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেননি। এ প্রসঙ্গে কৌশলী জবাবে মিশ্রি বলেন, অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা আছে। তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সবকিছু নির্ভর করছে উপযুক্ত সময়ে নেতাদের উপস্থিতির ওপর। কার কার সঙ্গে বৈঠক হবে, তা চূড়ান্ত হলে বলা যাবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা-দিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এই টানাপোড়েন থেকে হয়তো উভয়পক্ষ চাইছে না নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক হোক।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নিউইয়র্কে মোদি যাবেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছিল ঢাকার তরফ থেকে। সেজন্য আগ বাড়িয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক চায়নি ঢাকা। এখন মোদির যাওয়া নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখনও বৈঠক নিয়ে সেই অর্থে প্রস্তুতির ইঙ্গিত মিলছে না।
আগামী মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। সেখানে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ থাকছে নরেন্দ্র মোদিরও।
বাইডেনের সঙ্গে দেখা হবে ইউনূসের
আয়োজক দেশ হিসেবে নিউইয়র্কে বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথিতের জন্য সংবর্ধনা দেওয়ার রীতি রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি অতিথিদের জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সেখানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের। সেই অনুষ্ঠানে বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি কথা বলার সুযোগ হবে ড. ইউনূসের।
জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত এক থেকে দেড়দিনের জন্য নিউইয়র্কে আসেন। সাধারণত ওই সময়ে বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন না। তবে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার সুবাদে যতটা আলাপ করা যায়, সেটি হয়তো করার চেষ্টা করেন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার কূটনীতিক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট অল্প সময়ের জন্য নিউইয়র্ক আসেন। আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঐতিহ্যগতভাবে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। প্রধান উপদেষ্টার অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত কারও সঙ্গে বৈঠক করেন না, যদি পাওয়া যায় সেটি অবশ্যই এক্সক্লুসিভ ব্যাপার।
নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, অধিবেশনের সময় সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন না। এখন পর্যন্ত সেটিই আমরা জানি। যদি উভয়পক্ষের সময়সূচি মেলে, হয়তো অন্য কোনো উপায়ে দেখা হওয়ার একটা সম্ভবনা আছে।
ড. ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন যারা
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ২০-২৫ জনের একটি প্রতিনিধিদলের বহর নিউইয়র্ক যাবেন। এই দলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এবার অনেক কম লোক যাচ্ছেন। এখনও চূড়ান্ত সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না। সংখ্যাটা ২০-২৫ হবে। যদি বেশি হয়ে থাকে, ৩০-এর বেশি নয়। আগে কিন্তু সবার এনগেজমেন্ট থাকত না। এবার প্রত্যেকের এনগেজমেন্ট আছে এবং এর বাইরে কাউকে বহরে রাখা হচ্ছে না। এটাই এবার এক্সক্লুসিভ।
এনআই/কেএ