বাংলাদেশ কী করবে না করবে সেটা একান্তই নিজেদের ব্যাপার
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত জোট ‘কোয়াড’-এ বাংলাদেশ যুক্ত হোক- এমনটা চায় না চীন। বাংলাদেশ যদি ওই কোয়াডে যোগ দেয়, তবে ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘অনেক খারাপ’ হবে বলে চীনের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন।
তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কী করবে না করবে সেটা একান্তই নিজেদের ব্যাপার। তাছাড়া জোট কোয়াডে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কখনও আগ্রহ দেখায়নি বাংলাদেশ।
সোমবার (১০ মে) ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে কোয়াড ইস্যুতে বাংলাদেশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোয়াডে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো আলোচনা কিংবা আগ্রহ দেখায়নি। ঢাকা কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না- এটা সরকারের স্পষ্ট বার্তা। মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, নিজে থেকে বাংলাদেশের বিপদ ডেকে আনার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের কূটনৈতিক নীতি অনুযায়ী ঢাকা পরিচালিত হবে।
আরও পড়ুন: ‘কোয়াডে যোগ দিলে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক খারাপ হবে’
চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে উত্তর দেওয়া অবান্তর। আমরা কী করব না করব এটা আমাদের ব্যাপার। আর আমাদের কেউ কোয়াডে দাওয়াতও দেয়নি, আমরা আগ্রহও দেখাইনি; আমাদের কেউ বলেওনি। তারা (চীন) স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তাদের মতামত দিতেই পারেন।'
বাংলাদেশ যেহেতু কোয়াডে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখন অবদি কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সেখানে বেইজিংয়ের প্রতিনিধির এমন মন্তব্যের কোনো প্রতিবাদ সরকারের তরফ থেকে জানানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে রাজি নই। আমরা আমাদের কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করব। এসব উস্কানিমূলক কথাবার্তাকে আমরা সাধারণত স্বাগত জানাই না।’
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তবে চীন পূর্বকৌশল হিসেবে আগাম জানিয়ে রাখছে, তাদের বিরুদ্ধাপক্ষে অবস্থান নিলে তারা সেটা ভালোভাবে নেবে না।
এদিকে গত ২৭ এপ্রিল একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গি। সেই সফরে ফেঙ্গি ঢাকাকে জানিয়ে গেছেন, তার দেশ কোয়াডকে ‘চীনবিরোধী জোট’ মনে করে।
চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফরের ১৪ দিনের মাথায় রাষ্ট্রদূত লি জিমিং কোয়াড ইস্যুতে বলেছেন, 'আমি এটি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই চার সদস্য বিশিষ্ট ক্লাবে যোগ দিলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দেবে এমন কথা কখনও বলেনি। চীন যেহেতু এখানে (বাংলাদেশ) ইনভলব পার্টি, যেহেতু চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই কোয়াডটা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তারা মনে করে; কাজেই চীন তো রিয়েক্ট করতে পারে। তবে বিষয়টা হচ্ছে, বাংলাদেশ কিন্তু এখনও বলে নাই তারা এই কোয়াডে যোগ দেবে। তারা হয়ত আগে থেকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, চীন এটা ভালোভাবে নেবে না। এটা তাদের পূর্বকৌশল। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ বর্তমান অবস্থায় এটা করবে না, করার কারণও নেই।’
চীনের রাষ্ট্রদূতের এমন শক্ত বক্তব্যে ঢাকার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘একটা বিষয় আমাদের বুঝতে হবে, বড় দেশগুলো তাদের অবস্থান খুব সহজেই পরিষ্কার করতে পারে। আমাদের যেমন অনেকটা সাবধানে কথা বলতে হয়, তাদের তেমনটা না বললেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
এনআই/এসএম