প্রতিরক্ষায় আগ্রহী জাপান, বাংলাদেশ চায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক
![প্রতিরক্ষায় আগ্রহী জাপান, বাংলাদেশ চায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2024June/01716105-fabb-4ce7-8be1-f9181840201b-20240624220658.jpg)
বৈঠকে গুরুত্ব পাবে প্রতিরক্ষা-অর্থনীতি
অর্থনৈতিক সম্পর্ক-সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ
প্রতিরক্ষা ও মেরিটাইম সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী জাপান
দুদেশের আলোচনায় থাকবে আইপিএস
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ও জাপান। একই সঙ্গে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বিষয়গুলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে ঢাকায় দুই দেশের পঞ্চম যৌথ পরামর্শক সভা (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাপানের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনিয়র উপমন্ত্রী ওনো কাইছি নেতৃত্ব দেবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস), প্রতিরক্ষা, মেরিটাইম সিকিউরিটি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, সংযোগ (কানেক্টিভিটি) ও অবকাঠামোগত সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে।
![বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছেছে](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023April/633-20230426183135.jpg)
কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে, এ অঞ্চলে জাপানের সহযোগী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে সমর্থনের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, সাধারণত এফওসিতে সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। গত বছর দুই দেশের বৈঠকটি টোকিওতে হয়েছিল। ওই বৈঠকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, তার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। জাপানের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়ে কথা উঠতে পারে। জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা আগ্রহী। আবার উভয়পক্ষ চাইছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও মেরিটাইম সহযোগিতা বাড়াতে।
আরও পড়ুন
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ধরণ জানতে চাইলে এ কূটনীতিক জানান, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি সই হয়। সেই চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষা সংলাপ, সফর বিনিময়, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কোর্স, সেমিনার, কর্মশালা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো সম্মত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে মতো বিষয় রয়েছে। এ ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে এক্সচেঞ্জ হচ্ছে। তবে তারা আমাদের সঙ্গে এ ধরনের এক্সচেঞ্জ করছে না।
এ ছাড়া, সমুদ্র নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সহযোগিতার বিষয় রয়েছে। যেমন- গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে সহযোগিতা হতে পারে।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাপান বাংলাদেশের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায়। বছর দুয়েক আগে জাপানি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিমান বাহিনীর জন্য রাডারসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে আগ্রহ বোঝার জন্য বাংলাদেশে সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। জাপান ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর কাছে এ সরঞ্জাম বিক্রি করছে।
পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) প্রসঙ্গ আলোচনার টেবিলে থাকছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত জোট বা কোয়াডের গুরত্বপূর্ণ সদস্য জাপান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত— এ চার দেশের জোট কোয়াড। চার জাতির এ জোটে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ ভারত। এ অঞ্চলের অন্য কোনো দেশ এখন পর্যন্ত এতে যুক্ত হয়নি। কোয়াড জোট ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলোকে অংশীদার বানাতে আগ্রহী। চীনবিরোধী বলে পরিচিত কোয়াড জোটে বাংলাদেশকে অনেক আগ থেকে টানার চেষ্টা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশকে অংশীদার মনে করে। তবে বাংলাদেশের স্পষ্ট বার্তা ইন্দো-প্যাসিফিকের কোনো সামরিক কর্মকাণ্ডে নয় বরং অর্থনৈতিক কোনো সুবিধা থাকলে তাতে যুক্ত হতে আপত্তি নেই। ধারণা করা হচ্ছে, পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জাপান আইপিএস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাইবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মে মাসে ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি বা ইপিএ (যা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির এক ধরন) শর্তাবলি নিয়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৬ সালের নভেম্বরে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের উত্তরণের (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনায় থাকতে পারে ইপিএ প্রসঙ্গ।
প্রসঙ্গত, জাপানের সঙ্গে পঞ্চম যৌথ পরামর্শক সভা নিয়ে গত ৫ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়।
এনআই/এমজে