নিজেদের রোজগারে প্রথম কোরবানি, রায়হান-মুসলিমার তাই অন্যরকম ঈদ
সারাজীবন বাবাই কোরবানি দিয়েছেন। বাবা মারা গেছেন গত কোরবানির ঈদের পর। এবার তাই প্রথম কোরবানি দিচ্ছি, তাও নিজের রোজগারে। তাই ভালোলাগা যেমন কাজ করছে, তেমনি বাবার অনুপস্থিতিও টের পাচ্ছি।
কথাগুলো বলছিলেন রায়হান সরকার। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। একমাত্র সন্তান রাহাকে নিয়ে কোরবানির সব ফরমায়েশ সামলাতে আগেভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন রায়হান-মুসলিমা দম্পতি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালে তাদের সঙ্গে কথা হয় কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে। দেশ ট্রাভেলসের বাসে সকাল ১০টার টিকিট কাটা। বাসের শিডিউলও ঠিকঠাক। রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত যানজট ভোগান্তি না থাকলে বিকেলে বাসায় পৌঁছেই শিবগঞ্জে গরুর হাটে ঢুকবেন একটি বায়িং হাউজের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন
রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মা স্কুল শিক্ষক। স্ত্রী অনলাইনে বিজনেস করেন। নিজে বায়িং হাউজে চাকরি করি। বাবা থাকতে তিনিই সব করতেন। এবার বাবা নেই। ছোট ভাইটাও বেশ ছোট। তাই বউ-বাচ্চাকে নিয়ে সকাল সকাল বের হয়েছি। অফিসে সকালে হাজিরা দিয়েই কাউন্টারে চলে এসেছি। ভালো লাগছে। ছেলে রাহা ছোট, ও হয়ত বুঝছে না ঈদ কি! তবে আমার জীবনে এবারের ঈদটা অন্যরকম। কারণ নিজের রোজগারে প্রথমবার কোরবানি দেব।
কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে কথা বলে জানা যায়, সড়কে চাপ বাড়ছে। তবে এখনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি। সে চাপে ঘটেনি এখনো শিডিউল বিপর্যয়। শিডিউলের বাস যথাসময়েই ছেড়ে যাচ্ছে। তাই কাউন্টারে যেমন বাড়তি ভিড় নেই, নেই যাত্রী ভোগান্তিও।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের দেশ ট্রাভেলসের কল্যাণপুর খাজা মার্কেট কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা খালিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতের সড়কে চাপ ছিল। তবে সেটা সামলানো গেছে। শিডিউলে চাপ পড়েনি। আজ সকাল থেকে এখনো কোনো চাপ নেই। সড়কও বেশ ফাঁকাই। কাউন্টারে যাত্রীরা যেমন যথাসময়ে আসছে তেমনি বাসও ছেড়ে যাচ্ছে সময়মতো।
তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে যাতে শিডিউল সামলানো যায়, সেজন্য মালিকপক্ষ ৪০টা বাসের জায়গায় ৩০টা বাসের টিকিট ছেড়েছে। ১০টা বাস রিজার্ভে রেখেছে।
একই রুটের হানিফ পরিবহনের বাসের টিকিট বিক্রেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদ মানে সড়কে চাপ থাকবে। সেটা ভোগান্তির এখনো হয়নি। হলে তো আমাদের ও যাত্রী উভয়েরই সমস্যা। আপাতত সব ঠিকঠাক।
অন্যদিকে, কামরাঙ্গিরচর থেকে ৬ জন একসঙ্গে এসেছেন শ্যামলী কাউন্টারে। বাস ১০টায়, কিন্তু তারা এসেছেন আরও ঘণ্টাখানেক আগে।
ওবায়দুল হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, আজ শেষ কর্মদিবস। সড়কে চাপ থাকতে পারে শঙ্কায় বাসা থেকে আগেই বের হয়েছি আমরা। সবাই যাব রংপুরে। চাকরি করি এক সঙ্গে একই কারখানায়। বাড়িও রংপুরে। আনন্দ ভাগাভাগি করেই বাড়ি ফিরব।
গ্রামীণ ট্রাভেলসের কাউন্টারের সামনে সিএনজি থেকে নামেন সবুজ মিয়া। বউ বাচ্চার সঙ্গেই এবার নাটোরে ঈদ করতে যাচ্ছেন তিনি। সবুজ বলেন, ছোটদের ঈদ মানে আনন্দ। বাচ্চার আনন্দ আর মায়ের কারণেই বাড়ি যাই। কতো কতো বন্ধু যে ফোন দিচ্ছে। যেন মিস না করি, অবশ্যই যেন ঈদে আসি। স্বজনরাও অপেক্ষা করছে।
অন্যদিকে রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের তোড়জোড়। বেলা ১১টায় পুলিশ মহাপরিদর্শকের পরিদর্শন ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ও কার্যক্রম ব্যস্ত দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
তবে টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে নেই যাত্রীর চাপ। বিকেল থেকে চাপ বাড়বে, মিলবে যাত্রীর দেখা-এমনটাই আশা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
সেখানে কথা হয় ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি রুটে চলাচল করা ঈগল পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ঈদে সড়কে চাপ থাকবেই। কিন্তু এখনো কাউন্টারে যাত্রীর চাপ বাড়েনি। সড়কও বেশ খালি। আজ বিকেল থেকে যাত্রীর স্রোত শুরু হবে। কাল শুক্রবার। ঈদের আগে আজই শেষ অফিস। অফিস শেষে অনেকেই ছুটবেন কাউন্টারে। সে আশাতেই বসে থাকা।
জেইউ/জেডএস