টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ডাকাতদের হাতেই খুন ডাকাত সদস্য আজাদ
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আজাহার ওরফে আজাদ (৩৩) বড় ভাই শাজাহানের বাসা হতে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান মেলেনি। থানা পুলিশকে জানানোর পর খবর আসে আমিনবাজার হিজলা তুরাগ নদীর পূর্বপাশে নদীতে একটি মরদেহ ভাসছে।
২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর উদ্ধার করা মরদেহ আজাদের বলে শনাক্তের পর বড়ভাই মো. শাজাহান (৩৫) বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। পিবিআই জানায়, ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডাকাত দলের সদস্যের হাতেই খুন হন আজাদ। এঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কা (৪৯) ও তার অন্য দুই সহযোগী রুহুল আমিন লেদু (৪৩) ও সামিম হোসেন (৩৩)। একই দলেন সক্রিয় সদস্য আজাহার ছিলেন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কাচির আঘাতে নির্মমভাবে খুন করা হয়। পরে তার মরদেহ গুম করতে ফেলা হয় তুরাগ নদীতে।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত ডাকাত সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কার (৪৯) সহযোগী সামিম হোসেনকে (৩৩) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পিবিআই ঢাকা জেলা।
সোমবার (১০ জুন) দুপুরে পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলেন ধরেন পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা। এসময় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার (সিআরও অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, নিখোঁজের পর আজাহার ওরফে আজাদের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সাভার থানায় মামলা হয়। সাভার মডেল থানা পুলিশ হতে মামলার তদন্ত ভার গ্রহণ করে পিবিআই ঢাকা জেলা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পিবিআই ঢাকা জেলার একটি চৌকস দল অক্লান্ত প্রচেষ্টায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ছয় বছর আগের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ ঘটনায় জড়িত মজিবর আকন ওরফে টেক্কাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পূবাইল থানার মাজুখান বাগেরটেক এলাকায় তার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী সামিম হোসেনকে (৩৩) ডিএমপির শাহআলী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনই আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আদালতে জবানবন্দি এবং তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনার ভিত্তিতে পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার এবং আশুলিয়া থানা এলাকাধীন তুরাগ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিল। মামলার ভুক্তভোগী নিহত আজাদ নিজেও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঘটনার দিন গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টার পর সবাই আজাদসহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে ট্রলারযোগে তুরাগ নদীর গাবতলী ঘাট এলাকা হতে আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে আজাদের সঙ্গে ডাকাত সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কা (৪৯) ও মজিবরের প্রধান সহযোগী রুহুল আমিন ওরফে লেদুর পূর্বের ডাকাতির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে লেদু ধারালো বড় কাঁচি দিয়ে পেছন থেকে আজাদের মাথায় পরপর তিনটি কোপ দেয়। পরে মজিবরও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মরদেহ তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়ে সবাই চলে যায়।
পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দার মজিবর আকন ওরফে টেক্কার’র বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নয়টি মামলা, রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
রুহুল আমিন একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার সামিম হোসেনের বিরুদ্ধে এক ডাকাতির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত সর্দার মজিবর আপন ভাই আনোয়ার হোসেন শামীমও তাদের ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধেও তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
ডাকাত সর্দার মজিবর ও শামীম একেবারেই গরীব ঘরের সন্তান ছিল। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কিন্তু বর্তমানে তারা ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় গড়ে তুলছেন তাদের সাম্রাজ্য ডাকাতির টাকায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। ডুপ্লেক্স বাড়ির নির্মাণ শুরু করেছেন।
ডাকাত সর্দার মজিবরে প্রথম স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালে ২য় বিবাহ করেন। ঢাকায় অপরাধ করে গাজীপুরে ২য় স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপনে থাকতেন। তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী ভলগেট ও অন্যান্য নৌ-যানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।
কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই রাতের বেলা তার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবলসহ ঐসকল ট্রলারে ডাকাতি করতেন। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা ও ট্রলারের মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে নিয়ে আসতেন।
জেইউ/এমএ