বাড়তে পারে বিধিনিষেধ, গণপরিবহন চালুর চিন্তা
দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার আরোপিত চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায়।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ মে মধ্যরাতে। সাপ্তাহিক বন্ধ আর ছুটি ছাড়া এ বিধিনিষেধ শেষে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে আর মাত্র ৩ দিন। এ জন্য বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চলমান বিধিনিষেধ শেষে বৃহস্পতিবার ৬ মে প্রথম কর্মদিবস। এরপর ৭ ও ৮ মে শুক্র-শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। ৯ মে রোববার এক দিন কর্মদিবস থাকলেও পরেরদিন ১০ মে সোমবার শবে কদরের ছুটি।
এর পরদিন ১১ মে মঙ্গলবার কর্মদিবস হলেও ১২ মে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। সে হিসেবে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে মাত্র তিন দিন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঈদের আগে যেহেতু কর্মদিবস কম সেহেতু বিধিনিষেধ চলমান রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।’
একই তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কিছু শর্ত শিথিল করে বিধিনিষেধ বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। চলমান বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার আগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিধিনিষেধ বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। পরে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এটি বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।
সর্বশেষ ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কয়েকটি শর্ত সংযুক্ত করে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপের সময় বাড়ানো হলো।
৫ মে পর্যন্ত নতুন যুক্ত হওয়া নির্দেশনা
১. স্থল, নৌ ও বিমানযোগে যেকোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের (পণ্য পরিবহন ব্যতীত) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি বা অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
২. দোকানপাট ও শপিংমলগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বাজার বা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩. আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
৪. মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদসহ নন-কোভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানাকে আগমন ও কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে অবহিত করতে হবে।
৫. উল্লেখিত দেশ থেকে আগত শুধুমাত্র নন-কোভিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় থাকবেন। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি প্রদান করলে তারা স্ব স্ব বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তবে সেক্ষেত্রে তাদের স্ব-স্ব থানাকে অবহিত করতে হবে।
৬. অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
এসএইচআর/এফআর/জেএস