কানেক্টিভিটি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ-ভুটান
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সড়ক, রেল ও পানিপথে কানেক্টিভিটি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ও ভুটান। উভয় দেশ মনে করে যে, অর্থনৈতিক সংহতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি গুরুত্বপূর্ণ।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের সফর উপলক্ষ্যে সোমবার (২৫ মার্চ) প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এমন প্রত্যাশার কথা তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উভয় দেশ আঞ্চলিক সংস্থা, যেমন- সার্ক ও বিমসটেকে এ বিষয়ে কাজ করবে।
কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটান বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং রাজা জিগমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সফর করবেন। ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভুটানের গেলেফু শহর থেকে মাত্র ১৯০ কিলোমিটার দূরে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বৃহত্তর সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অন্যতম সহযোগিতা খাত এবং এ খাতে উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়।
উভয় দেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে এবং মসৃণ উত্তরণের জন্য উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে সম্মত হয়।
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি। সেখানে রাজাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জিগমে খেসার। পরে রাজধানীর একটি হোটেলে রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত ভুটানের রাজা। সেখানে দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা চুক্তি ও একটি নবায়ন চুক্তি সই করা হয়েছে। চুক্তিগুলো হলো— থিম্পুতে একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশ এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সহযোগিতা দেবে। দ্বিতীয়টি হলো- কুড়িগ্রামে ভুটানের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। তৃতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশে ডিরেক্টরেট অব ন্যাশনাল কনজুমারস রাইটস প্রটেকশন এবং ভুটানের কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজুমারস অ্যাফেয়ার্স অথরিটির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক চুক্তিটি নবায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবছর ভুটানের ২২ জন শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে স্কলারশিপে পড়তে আসেন এবং এ সংখ্যাকে ৩০-এ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি ভুটানে একটি ডিপ্লোমেটিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খোলার জন্য সহায়তা প্রদান করবে এবং ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য দুটি আসন ভুটানের কূটনীতিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে।
কৃষি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে ৭ থেকে ১০ জন ভুটানের কর্মকর্তাকে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সরকারের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে তৈরি কিছু ট্যাব ও ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়েছে ভুটানকে।
সফরের দ্বিতীয় দিন ভুটানের রাজা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং স্বাধীনতার দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এদিন তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। বিকেলে তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
এছাড়া সফরকালে রাজা ২৭ মার্চ পদ্মা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করবেন।
পরদিন অর্থাৎ সফরের শেষ ২৮ মার্চ দিন ভুটানের রাজা কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। ওইদিন বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে রাজা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজাকে বিদায় জানাবেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গার্ড অব অনার প্রদান করবে।
এনআই/এমএ