ঢামেকের ইনজেকশন বিক্রি করে দিচ্ছিলেন ২ নার্স, হাতেনাতে ধরা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ভবন থেকে গোপনে সরিয়ে নিয়ে সরকারি ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ২ নার্স ইনচার্জের বিরুদ্ধে। তাদের হাতেনাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে হাসপাতাল প্রশাসন। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ইনজেকশন, সিরিঞ্জ ও স্যালাইন জব্দ করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন, হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ ফারজানা আক্তার ও সহকারী ইনচার্জ জেসমিন আক্তার।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে দুজনকে আটক করে ইনজেকশনসহ হাসপাতালের পরিচালকের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি সরকারি ওষুধ কয়েকজন নার্সের সহযোগিতায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের সন্দেহ হলে এক রোগীর প্লাস্টিকের বালতি চেক করে তাতে প্রায় ১২ হাজার টাকার বিক্রয়-নিষিদ্ধ সরকারি ইনজেকশন পাওয়া যায়। সেখানে ছিল মেরোপেনেম ইনজেকশন, মেট্রো ইনজেকশন, ডিসটিল ওয়াটার, সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট। ওই রোগীর এক স্বজন জানান, ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ ফারজানা ও সহকারী ইনচার্জ জেসমিন আক্তার ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ইনজেকশনগুলো বিক্রি করেন।
আনসার সদস্যরা জানান, অভিযুক্ত ২ জনকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে পরিচালকের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সের ইনচার্জ ফারজানা ও সহকারী ইনচার্জ জেসমিন আক্তারের মুঠোফোনে কল দিলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে হাসপাতালের নার্সের সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি পরিচালককে জিজ্ঞেস করুন।
এদিকে অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ওই দুই নার্সকে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে রেখে আসার কিছুক্ষণ পর ওই দুই নার্স পরিচালকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে ঢামেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক কারিমা খাতুনের কক্ষে গিয়ে মুচলেকা লিখে পরিচালকের কাছে জমা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন নার্স বলেন, প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে ঢামেকে। সরকার যেখানে গরিব, অসহায় রোগীদের জন্য ওষুধ ও ইনজেকশন ফ্রি করেছেন সেখানে কিছু অসাধু নার্স সামান্য টাকার বিনিময়ে সেগুলো রোগীর কাছেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এগুলো লজ্জাজনক ব্যাপার। এ চক্রে শুধু হাসপাতালের নার্সরা নয়, এর সঙ্গে ওয়ার্ড বয় এবং মেডিসিন স্টোরের বেশ কয়েকজন কর্মী জড়িত আছে।
তারা আরও বলেন, এর আগেও ওষুধ চুরিতে জড়িত মেডিসিন স্টোরের ফার্মাসিস্ট, ওয়ার্ড বয় ও নার্সকে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে র্যাব দুজনকে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ আটক করেছিল। পরে তাদের মামলা দিয়ে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স বিপ্রজিত মণ্ডলের বিরুদ্ধে সরকারি ওষুধ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। সে সময় তিনি এ রকম ভুল আর হবে না বলে মুচলেকা দেন।
এসএএ/এমএ