রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে নারী অধিকার উল্লেখ জরুরি

নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন করতে হবে বলে জানিয়েছে নারী অধিকার ফোরাম বাংলাদেশ (অরফবি)। সংগঠনটি বলছে, পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান আর সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরে নারীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর এখানেই রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা অতি জরুরি।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'নির্বাচনী ইশতেহার ও নারী অধিকার' শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদা খানম মিলি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সামাজিক কর্মী ও নারীবাদী খুশি কবীর বলেন, প্রত্যেকটা দল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, তাদের বলব নারী অধিকারের বিষয়টা যেন তারা নির্বাচনী ইশতেহারে সামনে নিয়ে আসেন। যারা নির্বাচনে আসবেন না, তারাও যেন এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতে নারীর অগ্রাধিকারের ব্যাপারে বেশ নাম করেছে, এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। কিন্তু তারপরও আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, আমাদের সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার ছিল এবং আমাদের নির্বাচন কমিশনেরও অঙ্গীকার ছিল, এক তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের নমিনেশন দিতে হবে। একটা সময়সীমাও দেওয়া ছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। এখনো আমরা দেখছি, ৩০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেটাও মাত্র ৮ শতাংশ। এটা আমাদের আরও বাড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন যেটা আছে, অন্য সংসদ সদস্যরা যারা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছে তারা সমান দৃষ্টিতে দেখছে না। এই যে সংরক্ষিত আসন এবং সরাসরি নির্বাচিত আসনের মধ্যে যে পার্থক্যটা আছে, সেটা আমরা বারবার বলে আসছি– আমরা নারীদের কোটা সিস্টেম চাই অথবা কোনো ব্যবস্থা চাই। এখানে যেন কোনো ব্যবধান না থাকে।
আরও পড়ুন
সভায় মাহমুদা খানম মিলি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা মনে করি শুধু আমাদের বাংলাদেশে নয়, বরং পৃথিবীজুড়েই যেন নারী অধিকার নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে। ধর্ম, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্যের কারণে নারী অধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং মতপার্থক্য প্রতীয়মান। একপক্ষের কাছে যা অধিকার, অপরপক্ষের কাছে তা অনধিকার বলে বিবেচিত হয়। অনেকে আবার পুরুষের সমকক্ষতার অর্জনকেই নারীর প্রকৃত অধিকার বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক সচেতনতার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের আন্তরিকতা অতি জরুরি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১০, ১৯, ২৭, ২৮ ও ২৯ নম্বর ধারাগুলোতে জীবনের সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন আসে, পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে আদৌ কি নারী অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে? রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে নারীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
অরফবি সভাপতি বলেন, আমরা মনে করি সংবিধানের আলোকে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন করে বা আইনের সাহায্যে সাংবিধানিক অধিকার বলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে রাজনৈতিক নেতাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি অতি জরুরি।
মাহমুদা খানম মিলি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্ধন করা রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪৪টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। খুব শিগগিরই দেশ ও জাতির কাছে আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে নির্মাণ করবে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কতটা নিশ্চিত করবে কিংবা উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা ইশতেহারের মাধ্যমে তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, নারীর অধিকার, নারীর শিক্ষা, চিকিৎসা, সুরক্ষাসহ সমঅধিকারের বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতিবন্ধভাবে লিপিবদ্ধ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটারের অর্ধেক নারীদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাহলে নারী তার অধিকারের ব্যাপারে শুধু সচেতনই হবে না, ভোট প্রদানেও তার কাঙ্ক্ষিত মার্কা নির্বাচন করতে সক্ষম হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য ও খালেদ মোশাররফ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাহজাবিন খালেদ, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, নারী নেত্রী মমতাজ লতিফ, নারী অধিকার ফোরাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি রোকসানা বিলকিস, সহ সভাপতি সাবিহা সুলতানা লাবনী, সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর আজাদ মলি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরজাহান শামস প্রমুখ।
এমএইচএন/এসএসএইচ