গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিতে দলগুলোর প্রতি টিআইবির ৭৬ সুপারিশ
গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকারের লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৭৬ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
এ সুপারিশমালা তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাউসার আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে বলা হয়, স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ থেকে পরবর্তী ৫২ বছরে দারিদ্র বিমোচন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক জোট দ্বারা একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।
রূপরেখায় স্বাক্ষর করার মাধ্যমে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক জোট অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ, সার্বভৌম সংসদ গঠন, জবাবদিহিমূলক নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিল।
পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার ঘাটতির ফলে বারবার গণতান্ত্রিক পথ থেকে বিচ্যুতি ও নির্বাচনকালীন সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সুপারিশমালা তুলে ধরার প্রেক্ষাপটে বলা হয়, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চা গুরুত্বপূর্ণ হলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত শাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণের জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজনৈতিক দলের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যতীত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে টিআইবির নিয়মিত গবেষণা ও অধিপরামর্শ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সুশাসন-শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার/গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্তি ও এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য এই সুপারিশমালা প্রস্তাব ও উপস্থাপন করা হয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, নির্বাচনী শুদ্ধাচার চর্চা, আইনের শাসন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার, তথ্য ও উপাত্ত সুরক্ষা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, আর্থিক খাত ও সরকারি ব্যয়ে সুশাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন শীর্ষক ১২টি আলাদা পয়েন্টে ৭৬ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
জেইউ/কেএ