কৃষি গবেষণায় গ্রেড উন্নয়নে লোপাট ১০ কোটি!
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) তিন শতাধিক বৈজ্ঞানিক সহকারীর গ্রেড উন্নয়নের নামে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ওই কর্মকর্তাদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে (দ্বিতীয় শ্রেণি) উন্নীত করা হয়েছে। যেখানে কোটি কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব বিভাগীয় তদন্তেও গ্রেড উন্নয়ন ও নিয়োগের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যে কারণে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ফৌজদারি আইনে শাস্তির মুখোমুখি করতে সুপারিশ করা হয়। এবার এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের জন্য ইতোমধ্যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু নথিপত্র সংগ্রহ করেছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে দাফতরিক আদেশ জারি করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩৫০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারীকে ১০ম গ্রেডে (দ্বিতীয় শ্রেণি) উন্নীত করা হয়। ফলে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ১০ কোটি টাকা গচ্চা যায়
এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রতিষ্ঠান থেকে দাফতরিক আদেশ ইস্যু করে ১০ম গ্রেডে বেতন-ভাতা দেওয়ার তথ্য রয়েছে। যেখানে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘করোনার কারণে অনুসন্ধানে বিঘ্নিত হয়েছে। তবে, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এখনও চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। আমরা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি’— জানান ওই কর্মকর্তা।
সম্প্রতি দুদক যেসব রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিধিমালা, ইনস্টিটিউটে কর্মরত যেসব বৈজ্ঞানিক সহকারীকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে তাদের দাফতরিক আদেশসহ নামের তালিকা, ২০১৩ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে ড. মো. সাখাওয়াত হোসেনের বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি ইত্যাদি।
অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সহকারীদের নেতা ফকির মো. বেলায়েত হোসেন প্রায় ৩৫০ জনের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালককে ম্যানেজ করে বৈজ্ঞানিক সহকারীদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা বানানোর অবৈধ দাফতরিক আদেশ জারিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। এভাবে আরও অনেক বিধিবহির্ভূত কাজ করে ফকির বেলায়েত হোসেন প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দফতরে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হননি কেউ। অন্যদিকে অনুসন্ধানের তদারককারী কর্মকর্তা দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধানপর্যায়ে দুদকের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩৫০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারীকে ১০ম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণি) না হওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে দাফতরিক আদেশ জারি করে বেতন-ভাতা উত্তোলন করায় সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। অভিযোগে যাদের দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অডিট) মো. ইউনুস আলী, উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. শাহ্ আলম মৃধা ও বৈজ্ঞানিক সহকারীদের নেতা ফকির মো. বেলায়েত হোসেন।
অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সহকারীদের নেতা ফকির মো. বেলায়েত হোসেন প্রায় ৩৫০ জনের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালককে ম্যানেজ করে বৈজ্ঞানিক সহকারীদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা বানানোর অবৈধ দাফতরিক আদেশ জারিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। এভাবে আরও অনেক বিধিবহির্ভূত কাজ করে ফকির বেলায়েত হোসেন প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন।
করোনার কারণে অনুসন্ধানে বিঘ্নিত হয়েছে। তবে, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এখনও চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। আমরা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি
নাম প্রকাশ না করে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- জয়দেবপুরের ছায়াবিথীতে ছয়তলা বাড়ি, প্রাইভেট কার, ইসলামী ব্যাংক গাজীপুরের জয়দেবপুর শাখায় প্রায় এক কোটি টাকা জমা, গাজীপুরের সালনা মৌজায় ২০ কাঠার জমি এবং গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীর নামে কেনা পাঁচ একর সম্পত্তি।
সূত্র আরও জানায়, গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত ওই ইনস্টিটিউটে ২০১৩ সালে সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল এবং তার আত্মীয় উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে ৪৫-৫০ জন বৈজ্ঞানিক সহকারী নিয়োগ দেন। যা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে ৪২ জনের নামে পৃথক অভিযোগপত্র তৈরি করার সুপারিশ ছিল। যা এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বিএআরআই সূত্রে জানা গেছে।
আরএম/এসএসএইচ/এমএআর/