ডিবির সোর্স থেকে শহিদ মাঝি এখন ডাকাত
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সোর্স হিসেবে একসময় কাজ করতেন শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি। এরপর ২০১২ সালে তিনি গড়ে তোলেন ডাকাত দল। প্রায় একযুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল তার দলের সদস্যরা।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে শহিদুল মাঝির বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় সোমবার (১০ জুলাই) শহিদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি গুলশান বিভাগ। তার দলের মোট সাত জন ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অপর একটি দলের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই দলই একে অপরের পরিচিত।
গ্রেপ্তাররা হলেন– মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি (৫৩), সাগর চন্দ্র মালি (৩০), শাহ আলম হাওলাদার (৩৫), মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার (৩০), মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম (৪৩), মো. হাসান (৩৮), মো. নুরুল ইসলাম (৩০), মো. খলিলুর রহমান ওরফে মাগার (৪৬), মো. আকরাম হোসেন (৩৮), মো. দ্বীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহম্মেদ (৩৫), মো. ইলিয়াছ আহম্মেদ ওরফে নিরব (৩২), মো. ফরহাদ আলী (৬৬), মো. রিয়াজ হোসেন হাওলাদার ওরফে রিয়াজুল (৩১), মো. শফিকুল ইসলাম লিটন (৫০), মো. সেরাজুল ইসলাম (৪৪) ও মো. জহিরুল ইসলাম পিন্টু (৩৮)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোবাস, ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। সোমবার (১০ জুলাই) গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, শহিদ মাঝি একসময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করত। ২০১২ সালে শহিদুল মাঝি অন্যদের বুঝিয়ে ডাকাত দল তৈরি করে। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। আমরা সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গত ১৭ জুন মামলার বাদী আব্দুল আজিজ (৩১) ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার ভগ্নিপতির মাধ্যমে ভগ্নিপতির বন্ধুর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। ওই দিন বিকেলে পল্টন থানাধীন বায়তুল ভিউ মার্কেটের পাশে অবস্থিত কার্পেট মার্কেটের সামনে থেকে কাঁধ ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগে তার খিলক্ষেতের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছানো মাত্রই অজ্ঞাতনামা তিন-চার জন মাইক্রোবাসের মাধ্যমে তার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর অজ্ঞাতনামা তিন/চার জন ডিবির পোশাক পরিহিত অবস্থায় এবং ডিবি পরিচয়ে তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে হাত, পা ও চোখ বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়া ভুক্তভোগীর বিকাশের এজেন্ট নম্বর ও পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে রাত ১১টার দিকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার অন্তর্গত চরপাড়া সাকিনের রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে যায়।
পরে মামলাটির ছায়াতদন্তে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মামলার বাদীর বক্তব্য পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাইকারী দলটিকে শনাক্ত করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, গত ১০ জুলাই গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা চক্রের মূলহোতা মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহীদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন পাড়া ডগাইর ফার্মের মোড় এলাকা থেকে ডিবি লেখা কালো রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাস থেকে সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, পাড়া ডগাইরের একটি বাসা থেকে মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলামকে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ। ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফিট রোডের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরও নয় জনসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা পরস্পর যোগসাজশে মাইক্রোবাস যোগে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক এলাকায় বিশেষত মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান থেকে কোনো ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের টার্গেটকে ফলো করে। দুই/তিন জন মোটরসাইকেল নিয়ে টার্গেটের পিছু নেয়। পথে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের অগ্রগামী টিম প্রস্তুত থাকে।
মোটরসাইকেল টিমের তথ্যমতে সুবিধাজনক জায়গায় মাইক্রোবাস এসে টার্গেটকে গতিরোধ করে ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে যায়। ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায়– বলেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এমএসি/এসএসএইচ/