সমতলে বাড়ছে চা চাষ, স্বাবলম্বী হচ্ছেন শ্রমিকরা
পঞ্চগড়ের সমতলে চা বাগানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জেলার চাষিদের মধ্যে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চা চাষের আগ্রহ বেশি। ছোট-বড় বিভিন্ন পরিসরে চা বাড়ান গড়ে ওঠায় একদিকে যেমন বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে মজবুত হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত। ফলে গত ১৪ বছরে চা বাগান সংশ্লিষ্টদের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এ জেলাতে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার সমতল ভূমিতে চা চাষ করতে দেখা যায় চাষি ও বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে। যতদূর চোখ যায় ততটুকুই যেন চা বাগান। প্রতিটি বাড়ির আশপাশে নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠছে ছোট-বড় চা বাগান।
বাড়ি পাশে দুই বিঘা জমিতে চা চাষ করেছে কুদ্দুস মিয়া নামের তেঁতুলিয়ার এক চাষি। তিনি বলেন, আমি ২০১৩ সাল থেকে আমার জমিতে চা চাষ করছি। আমার বাগানে আমি ও আমার ছেলে-মেয়েরা কাজ করছে। কয়েক দিন আগে পাতা তুলেছি। এখন নতুন পাতা আসছে, আবার তুলবো।
একই উপজেলার আরেক চা চাষি মমতাজ বেগম বলেন, আগে ধান চাষ করতাম কিন্তু এখন চা চাষ করে অনেকটাই স্বাবলম্বী। আগে বছরে যে ধান পাইতাম তা দিয়ে সংসার চলতে কষ্ট হতো। এখন কষ্ট হচ্ছে না। আমার মতো ছোট চা চাষিদের যাদের ফ্যাক্টরি নাই, তারা অন্যদের ফ্যাক্টরিতে পাতা বিক্রি করে থাকি। শেখ হাসিনা জন্য আমাদের ভাগ্য বদল হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পঞ্চগড়বাসী সমতলে চা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে এ জেলায় চা চাষের সূত্রপাত হয়। ২০০৬ সালে চা আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯২৫ একর, যা বর্তমানে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২ হাজার ৭৯ একর। চা চাষ থেকে শুধুমাত্র সবুজ পাতা উৎপাদন হচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি কেজির বেশি এবং চা তৈরি হচ্ছে বছরে প্রায় পৌনে ২ কোটির বেশি। বর্তমানে এ জেলায় মোট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৯টি বড় ও ৮৩৫৫টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান রয়েছে। চা শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৬ সালে যেখানে মাত্র ১৪৭৫ জন শ্রমিক এ শিল্পের জড়িত ছিল, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে বর্তমানে জেলার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সংযুক্ত রয়েছে। কাঁচা চা পাতা বিক্রি করে ক্ষুদ্র কৃষক বছরে একর প্রতি ২/৩ লাখ টাকা আয় করছে। বছরে এ শিল্প থেকে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে, যা চা খাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়। ২০০৯ সালে এ জেলার মোট চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬.৫৯ লাখ কেজি, যা ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ কেজি।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ১৪ বছরে বদলে গেছে পঞ্চগড় চা শিল্প। এই জেলায় একটি কারখানা থেকে হয়েছে বর্তমানে একাধিক কারখানা। অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখছে এই চা শিল্প৷ চা আবাদি জমির পরিমাণ ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৯২৫ একর, ২০২২-২৩ সালে ১২০৭৯ একর, সবুজ পাতা উৎপাদন (কেজি) ২৩০০০০ (২০০৫-০৬), ৯০২৭৪৬৩২ (২০২২-২৩)। তৈরি চা উৎপাদন (কেজি) ৪৪৫০০ (২০০৫-০৬), ১৭৭৮১৯৩৮ (২০২২-২৩)। বড় চা বাগান ১টি (২০০৫-০৬), ৯টি (২০২২-২৩)। ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান ১৭২টি (২০০৫-০৬), ৮৩৫৫টি (২০২২-২৩)। চলমান চা কারখানার সংখ্যা ১টি(২০০৫-০৬), ২৬টি (২০২২-২৩)। চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা ১৪৭৫ জন (২০০৫-০৬), ১৫০০০ জন (২০২২-২৩)। চা শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ২২০০ জন (২০০৫-০৬), ৩০০০০ জন (২০২২-২৩)। চা বিক্রি থেকে আয় (কোটি টাকা) ১.২ কোটি (২০০৫-০৬), ২৮০ কোটি (২০২২-২৩)। প্রশিক্ষণ প্রদানের সংখ্যা ১৫টি (২০০৫-০৬), ৩১০টি (২০২২-২৩)।
জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পঞ্চগড়ের সমতলের চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই এ জেলায় দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর ঘোষণা দিয়েছেন, যা খুব শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে।
এমএসআই/এসএম