পদ্মা সেতুতে চীনা ভাইস মিনিস্টারের ৫০ মিনিট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ পরামর্শক সভা করার প্রস্তাব দেয় চীন। সরকারপ্রধানের তিন দেশ সফরসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নানা ব্যস্ততা থাকলেও বেইজিংয়ের প্রস্তাবে না করতে পারেনি ঢাকা।
সিদ্ধান্ত হলো শনিবার (২৭ মে) ঢাকায় এফওসি হবে। একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে শুক্রবার (২৬ মে) রাতে ঢাকায় আসবেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং। নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় এলেন ওয়েইডং। ঢাকায় পা ফেলার সাড়ে নয় ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ১০টার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সম্পর্কের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনায় বসে ঢাকা-বেইজিং। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বের আসনে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং।
রুদ্ধ-দ্বার এ বৈঠকের সংবাদ প্রকাশে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার বাহিরে অপেক্ষায় গণমাধ্যমকর্মীরা। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা পৌঁছাতে নামে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ওইদিকে পদ্মার ভেতরে চলছে ঢাকা-বেইজিংয়ের আলোচনা। দুপুর সাড়ে ১২টায় নামে ঝুম বৃষ্টি। বেশ খানিকটা সময় ধরে চলে বৃষ্টি। কিন্তু ভেতরের আলোচনা যেন শেষই হয় না। দুপুরের খাবারসহ আলোচনা চলে আড়াইটা অবধি।
আড়াইটার পরেই পদ্মা থেকে গাড়ি হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়েন পরাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে কোনো কথাই বললেন না সচিব। চীনা ভাইস মিনিস্টারও প্রতিনিধিদল নিয়ে পদ্মা থেকে বেরিয়ে পড়েন। এবার লক্ষ্য মাওয়ার পদ্মা। পুলিশের এসকর্ট নিয়ে রমনা থেকে দেড় ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময়ের মধ্যে ওয়েইডং পৌঁছে যান পদ্মার মাওয়া প্রান্তে। সেখানে পদ্মার ভিত্তি প্রস্তরের সামনে চীনা একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চাইনিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো আছেনই।
পদ্মা সেতুর শুরুর অংশে গিয়ে থামানো হয় গাড়ির বহর। মিনিট পাঁচেক পদ্মা সেতু ঘুরে ঘুরে দেখেন ভাইস মিনিস্টার। সেখান থেকে ভাইস মিনিস্টারকে দেখাতে নেওয়া হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। পদ্মা সেতু থেকে বেশ কয়েক ফুট নিচে রেল সংযোগ ঘুরে দেখেন ওয়েইডং। সেখানেও তাকে রেল সংযোগ নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করা হয়। প্রায় ৫০ মিনিট পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কাটিয়ে সেতু পার হন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল।
এদিকে, এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে কোনো পক্ষই গণমাধ্যমে কথা না বললেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয় একটি প্রেস রিলিজ। সেখানে বলা হয়, অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। পাশাপাশি জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপের বিষয়ে উভয়পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
উভয়পক্ষ বাংলাদেশে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মাসেতুর রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায়। এছাড়া বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও প্রবাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া বাংলাদেশি ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্ক এবং কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা করে।
এছাড়া চীনের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। ঢাকার পক্ষ থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রির আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, লেদারের মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠকে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয়পক্ষ। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ করে, প্রত্যাবাসন নিয়ে হয় বিস্তর আলোচনা। বেইজিং রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কানেক্টিভিটি, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগে (জিডিআই) এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং উচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক সফরে বিনিময় নিয়েও আলোচনা হয় সভায়। এক্ষেত্রে জিডিআই নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চায় বেইজিং। ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনের এ উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে।
ওয়েইডং ভাইস মিনিস্টারে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে এলেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
আগামীকাল রোববার (২৮ মে) প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে চাইনিজ ভাইস মিনিস্টারের।
এনআই/এমএ