সম্পর্ক নতুন মাত্রায় যুক্ত করছে বাংলাদেশ-জাপান
বাণিজ্য-বিনিয়োগে প্রাধান্য সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও জাপান। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ প্রতিরক্ষা খাতে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে কৌশলগত অংশীদারত্বে যাত্রা শুরু করতে চায়। টোকিওতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার শীর্ষ বৈঠক থেকে কৌশলগত অংশীদারত্বের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চার দিনের সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের দ্বিতীয় দিন ২৬ এপ্রিল টোকিওতে শীর্ষ বৈঠকে বসবেন হাসিনা-কিশিদা। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে প্রতিরক্ষাসহ ৬ থেকে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ বৈঠকে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আসছে। প্রধানন্ত্রীর এ সফরে এটা খুব গুরত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হচ্ছে কৌশলগত অংশীদারত্বের একটি উপাদান। এ সফরে দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নেওয়ার একটা প্রচেষ্টা থাকবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রায় বছর তিনেক আগে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আগ্রহ দেখায় জাপান। কৌশলগত অংশীদারত্ব নিয়ে জাপানের পক্ষ থেকে খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হয় ঢাকাকে। টোকিওর প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে এরইমধ্যে মতামত পাঠিয়েছে ঢাকা। জাপানের দিকে থেকে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে আশা করা হচ্ছে, হাসিনা-কিশিদার শীর্ষ বৈঠক থেকে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত করার ঘোষণা আসবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে কৌশলগত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা নিয়ে একটি মেমরেনডাম হবে। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এগুলো যদি হয় তাহলে বোঝাবে আমরা এখন কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ থেকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে উন্নীত হয়েছি।
জানা গেছে, সরকারপ্রধানের জাপান সফরে জাহাজভাঙা শিল্পের আধুনিকায়ন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, শুল্ক খাত, বিনিয়োগ সহায়ক মেধাস্বত্ব, মেট্রোরেলের সমীক্ষা ও শিল্পের মানোন্নয়নসহ আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ৬ থেকে ৮টি এমওইউ সই হতে পারে। আমাদের চাওয়া থাকবে অন্তত ৮টি এমওইউ সই হোক। এছাড়া আমরা এমআরটি লাইন-১ ও ৩ (মেট্রোরেল) নিয়ে একটা বাজেট চাইব। ঠিক কত টাকা চাওয়া হবে, সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল) হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাপানের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাবেন। এটা খুব ভালো সফর হবে। শুনেছি ৮ থেকে ১০ সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি এখন বলতে পারব না।
বাংলাদেশের কাছে রাডারসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করতে চায় জাপান। গত বছর এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জাপানের দুটি প্রতিনিধিদল ঢাকা ঘুরে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে জাপান থেকে রাডারসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি আসছে কি না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মোমেন বলেন, আমি বলতে পারব না।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফর নিয়ে বাংলাদেশ এবং জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সম্মানিত অতিথিকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করবেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে অবদান রাখায় জাপানি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, শেখ হাসিনার এ সফরের মধ্য দিয়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
গত বছরের নভেম্বরের শেষদিকে জাপান সফর করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু শেষ সময়ে সফরটি স্থগিত করা হয়।
উল্লেখ্য, সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে প্রথম জাপান সফর করেন। এরপর ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং সবশেষ ২০১৯ সালে টোকিও সফর করেন তিনি। এবারের সফর দেশটিতে তার ষষ্ঠ সফর হতে যাচ্ছে।
৪ জাপানি বন্ধু পাচ্ছেন ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখায় ৪ বিশিষ্ট জাপানি নাগরিককে দেওয়া হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা ৪ জাপানি বন্ধুর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ৮ জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এবার এ সম্মাননায় যুক্ত হচ্ছেন আরও ৪ জাপানি বন্ধু।
৪ জাপানি নাগরিককে সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এখনই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ঢাকায় চিলড্রেন লাইব্রেরি করে দেবে জাপান
শিল্পের মানোন্নয়ন নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে চায় বাংলাদেশ ও জাপান। তার আওতায় বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে একটি চিলড্রেন লাইব্রেরি করার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর সমঝোতা স্মারকটি সই হতে পারে। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় ঢাকায় চিলড্রেন লাইব্রেরি করা নিয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় চিলড্রেন লাইব্রেরি করবে জাপান। জাতীয় জাদুঘরে এটি করতে চায় জাপান। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
এনআই/জেডএস